বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, মহান মুক্তিসংগ্রাম ও বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই অর্জন কোন দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির অর্জন ছিল না বরং এই তা ছিল দলমত, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের কাঙ্খিত সাফল্য। তাই মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীরদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও মহান বিজয়কে টেকসই ও অর্থবহ করতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, আশরাফুল আলম ও ছাত্রনেতা গোলাম মর্তুজা প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, অনেক ত্যাগ-কোরবানী ও রক্তের বিনিময়ে গণমানুষের বিজয়ের আকাঙ্খা বাস্তবরূপ লাভ করেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই জনপদের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তারা যুদ্ধ করেছেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও পাকিস্তানের জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার সংগ্রামের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব শহীদ সিরাজউদ্দৌলা, শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেক মহান নেতা। মূলত স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও কঠিন হলো স্বাধীনতা রক্ষা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা আজও সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজই স্বাধীনতার ইপ্সিত লক্ষ্য। কিন্তু মহল বিশেষের ক্ষমতালিপ্সা, অপরাজনীতি ও অহমিকার কারণে সে প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যখন পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করা উচিত ছিল তখন ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য তাদের সকল শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়েছে। তারা সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। The Newspaper (Announcment Of declaration) Act-1975 মাত্র ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ব পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তদানীন্তন সরকার এই এ্যাক্ট পাসের আগেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে আসছিলো। ১৯৭৩ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদ অভিযোগ করেছিলেন, ‘গণকন্ঠ অত্যন্ত বেআইনিভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়ার ফলে তথাকার পৌনে তিনশ’ সাংবাদিক ও কর্মচারী বেকার হইয়া পড়িয়াছেন। সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মুহূর্ত মাত্র সময় না দিয়া অফিস হইতে কাজ অসমাপ্ত রাখা অবস্থায় বাহির করিয়া দেয়া হইয়াছে’। যা ছিল মহান স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে। রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হলেও সরকার জনগণকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এমনকি রাজনৈতিক দলের ঘরোয়া বৈঠকগুলোকে কথিত গোপন বৈঠক আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিক ও আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ সহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ঘরোয়া বৈঠক থেকে গ্রেফতার করে দফায় দফায় রিমান্ডের নামে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি সরকারকে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আমীরে জামায়াত সহ জামায়াতের শীর্ষনেতারে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।