বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বুদ্ধিজীবীগণ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির এই জাগ্রত সন্তানদের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও মনীষা দেশ ও জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। কিন্তু মহান বিজয়ের মাত্র ২ দিন আগে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা ছিল দেশ ও জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য এ কে মজুমদার, জামায়াত নেতা এন হক মোল্লা ও আইয়ুব আলী প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত জাতি হিসেবে আমাদেরকে যারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের নেপথ্যের শক্তি। কিন্তু বিজয়ের প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও এই হত্যাকান্ডের কুশিলবরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধান আজও রহস্যাবৃত। মূলত জহির রায়হান বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলেই রহস্য প্রকাশ হওয়ার আগেই তাকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘকাল পরেও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। বস্তুত শহীদ জহির রায়হানের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, ডকুমেন্টারি-প্রামাণ্য চিত্র সংরক্ষিত থাকার কারণেই তাকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত জাতির কাছে প্রকাশ পেলে যাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার আশঙ্কা ছিল, মূলত তারাই এসব হত্যাকান্ড ও অপকর্মের সাথে জড়িত। তিনি এই অপশক্তি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা না করে এই ইস্যুকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের হাতিয়ার বানিয়েছে। সরকারের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতির অংশ হিসেবেই মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে প্রহসনের মাধ্যমে বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, সাবেক সফল মন্ত্রী ও সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। মূলত চক্রান্তকারীরা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে দেশকে পরাশ্রয়ী করদরাজ্য বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি শহীদদের ত্যাগ ও কোরবানীকে কবুল করতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের মানুষকে সুশাসন উপহার দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উপর্যুপরি উর্দ্ধগতির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। চাল ও পিঁয়াজের মূল্য বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। কিন্তু ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকার জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মূলত সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই গণমানুষের ব্যাপারে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশ ও জাতিকে এই দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি অগণতান্ত্রিক ও বাকশালী সরকারের পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।