বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রাসুল (সা.) বিশ্ব মানবতার মুক্তির মহান দূত হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন মানবতার মহান শিক্ষক। বস্তুত আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসুল (সা.) এর অনুসৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই সমাজ-রাষ্ট্রে অশান্তি ও অবক্ষয়ের জয়জয়কার চলছে। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও রাসুল (সা.) এর প্রদর্শিত আদর্শকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করতে হবে। তিনি ইসলামী আদর্শের আলোকে সমাজ পরিবর্তনে আপোষহীন ভূমিকা রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সীরাতুন্নবী (সা.) এর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ফজলে আহমেদ ফজলু ও এ এস এম মনির প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, রাসুল (সা.) রাহমাতুলতিল আলামিন হিসাবে দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য ন্যায়-ইনসাফের প্রতীক। মহানবী (স) মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি তার মহানুভবতা, সহনশীলতা, অধ্যবসায়, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে তার ওপর অবতীর্ণ মহাগ্রন্থ আল কুরআনের আদর্শ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে তিনি শতভাগ সফলও হয়েছেন। আর এজন্য তাকে অবর্ণনীয় জুুলুম-নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছে। দ্বীনে হকের দাওয়াত দেয়ার কারণেই তাকে তায়েফে নির্মমভাবে নির্যাতিত ও রক্তাক্ত হতে হয়েছিল। মূলত রাসুল (সা.) আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার ও তমসার বিপরীতে সত্য এবং ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমাজে অবহেলিত-নির্যাতিত, সুবিধা বঞ্চিত ও দুঃখী মানুষের সেবা, মানবতাবোধ, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পরমতসহিষ্ণুতা, দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমাগুণ, শিশুদের প্রতি স্নেহশীলতা এবং নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (স)-এর আদর্শ অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়। সে জন্যই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে অভিষিক্ত।
তিনি বলেন, রাসুল (স.) ছিলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রসৈনিক। তার ২৩ বছরের নবুয়াতি জীবনে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকে জীবনে অনেক যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু এসব যুদ্ধের কোনোটিই আক্রমণাত্মক ছিল না। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) ২৭টি প্রতিরোধমূলক যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সাহাবিদের নেতৃত্বে ৫৭টি অভিযান পরিচালনা করেন। ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের পর মহানবী (সা.) বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে সংলাপ, সমঝোতা করে প্রভূত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। এগুলো বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখে। এই জন্যই মার্কিন পন্ডিত মাইকেল হার্ট মহানবী (স.)কে সর্ব যুগের ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী জর্জ বার্ণাডশ এর ভাষায়, ‘‘আমার বিশ্বাস নবী মুহাম্মদের মত কোন ব্যক্তি যদি বর্তমান বিশ্বের একনায়কের পদে আসীন হতেন, তাহলে তিনিই বর্তমান বিশ্বের সমস্যাবলীর এমন সমাধান দিতে পারতেন, যার ফলে সমস্ত বিশ্বে কাঙ্খিত শান্তি ও সুখ নেমে আসত।’’
তিনি আরও বলেন, একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব ও মহানবী (স.) এর রেখে যাওয়া আদর্শ থেকে বিচ্যুতির কারণেই মানব সভ্যতা ও মূল্যবোধ এখন খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। সমাজের সকল স্তরেই এখন অবক্ষয়ের প্রাবল্য চলছে। মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্রে ধ্বস নেমেছে। ফলে মানুষের উপর মানুষের জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, গুপ্তহত্যা, নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, আমানতের খেয়ানত, সুদ, ঘুষ, লুন্ঠন ও চাঁদাবাদী সহ নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুলুষিত করে ফেলেছে। চারদিকে অধিকার বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের আহাজারী শোনা গেলেও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত না থাকায় এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই শান্তির সমাজ, অপরাধ এবং বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদেরকে ইসলামী আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে হবে। বস্তুত ইসলামই হচেছ একমাত্র নির্ভূল ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তিনি সমাজে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকলকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হওয়ার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, ইসলামী আন্দোলনের উপর জুলুম-নির্যতনে কোন অভিনবত্ব নেই বরং তা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র। রাসুল (সা.) যখন মানুষের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন তখন তার উপরও নেমে এসেছিল অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন। তিনি কাফির-মুশরিকদের যুগপৎ জুলুম-নির্যাতন ও মুনাফিকদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের উপেক্ষা করে সবর ও ইসতিকামাতের মাধ্যমে দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তাকে শিয়াবে আবি তালিবে দীর্ঘ ৩ বছর অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি কখনও আদর্শ বিচ্যুত হন নি বরং সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই কালেমার পতাকাকে সমুন্নত করেছিলেন। তাই সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে চরম ধৈর্য্য, সহনশীলতা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সাথে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।