বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে। বর্তমান সরকারের আমলেই বিদ্যুতের দাম ৮ বার বাড়ানো হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা সরকারের এই গণবিরোধী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই মেনে নেবে না। তিনি হঠকারিতা পরিহার করে অবিলম্বে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণ জুলুমবাজ ও গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আগামী ১লা ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিটের অনুকুলে গড়ে ৩৫ পয়সা বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করার দাবীতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১ নং গোল চত্তর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাইনিজ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, নাসির উদ্দীন, আশরাফুল আলম, আব্দুল্লাহ মুয়াজ, জোবায়ের, আলাউদ্দীন মোল্লা, আবুল হাসান, ডা. শফিউর রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমান এবং শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি আব্দুল আলীম প্রমূখ।
মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের দাম আনুপাতিক হারে কমে যাওয়াই যৌক্তিক হলেও সরকার প্রতি ইউনিটের অনুকুুেল দাম বাড়িয়েছে ৩৫ পয়সা। যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দেবে। বর্তমান সরকারের আমলে ভোক্তা পর্যায়ে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে মোট ৮বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। মূলত ২০১০ সালের ১ মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি ও গ্রাহক দুই পর্যায়েই বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে পাইকারিতে ১১ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ। একই বছরের ১ আগস্ট পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া সে বছরের ১ ডিসেম্বর পাইকারিতে ১৬ দমমিক ৭৯ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ২০১২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৭ দশমিক শূণ্য ৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এরপর ওই বছররের ১ সেপ্টেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি পর্যায়ে ৬ দমমিক ৯৬ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। যা সরকারের গণবিরোধীতাই প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল লোকসানের অজুহাত তুলেছে। যা মোটেই বাস্তব সম্মত নয়। আসলে সরকার গণপ্রতিনিধিত্বশীল নয় বলেই তারা জনগণের কল্যাণে কোন কাজ না লুটপাটকে নির্বিঘ্ন করতেই দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়লেও দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এখন লাগামহীন। মূলত এই গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে জনদুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।