মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে মহান বিজয়কে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সাম্য, অবাধ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরেও আমরা বিজয়ের ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারিনি। সাম্যের পরিবর্তে অসাম্য, গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ, আইনের শাসনের নামে অপশাসন-দুঃশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সীমাহীন বৈষম্যসহ দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে দাসানুদাসে পরিণত করা হয়েছে। যা কোন স্বাধীন, সার্বভৌম ও কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট নয়। তাই স্বাধীনতা ও মহান বিজয়কে অর্থবহ করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি বিজয় অর্জনের জন্য নতুন করে সংগ্রাম শুরু করতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং যুদ্ধাহত-পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। মাত্র ৪ টি রাষ্ট্রায়াত্ব পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করে দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল। মূলত জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই তাদেরকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তারা ২০০৮ সালের পাঁতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোন দেশই আমাদের মত চড়ামূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামের ২৫ বছরে প্রাণহানি ঘটেছিল প্রায় ১২ লাখ মানুষের।
দীর্ঘ ৩২ বছরের মুক্তি সংগ্রামে ১০ লাখ আলজিরীয় প্রাণ হারিয়েছিলেন। কম্বোডিয়ায় গৃহযুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ২১ লাখ। আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীর পরাজয় পর্যন্ত ১৪ বছরের যুদ্ধে ২০ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধের ৮ বছরে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ অতিক্রম করেনি। এঙ্গোলায় ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৩ লাখ অঙ্গোলাবাসী। ১৯৮১ সাল থেকে শ্রীলংকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে তা চলে দু’যুগেরও অধিককাল ধরে। প্রাণহানির সংখ্যা ১ লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বসনিয়া-হারজেগোভেনিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধেও প্রাণহানির সংখ্যা দেড়লাখ অতিক্রম করেনি। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ৯ মাসেই লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের অপরাজনীতির কারণেই শহীদানের স্বপ্নের সমাজ আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
মহানগরী আমির বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে বহুধাবিভক্ত করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অপশাসন-দুঃশাসনের কারণে সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে দেশপ্রেমী জাতীয় নেতৃবৃন্দকে। সে ষড়যন্ত্র এখন অব্যাহত আছে। সরকারের জামায়াত বিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আমিরে জামায়াত মকবুল আহমদ, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে দফায় দফায় রিমান্ডের নামে হয়রানি ও নাজেহাল করা হচ্ছে। দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আসলে সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তিনি বয়োবৃদ্ধ আমিরে জামায়াত সহ জামায়াতের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করে আমিরে জামায়াত সহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য আলাউদ্দীন ও শহীদুল্লাহ, জামায়াত নেতা টিপু সুলতান, কামাল হোসেন ও ইসহাক প্রমুখ।