বাাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের অবশ্যই চৌকস, প্রজ্ঞাবান এবং সাংগঠনিক, নৈতিক, আদর্শিক, রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ে দক্ষতা- যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তিনি ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক কার্যক্রমে সকলকে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হরুন অর রশিদ খান। উপস্থিত ছিলেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক তানভীর হোসাইন প্রমুখ। কর্মশালায় গার্মেন্টস, রিক্সা, দোকান কর্মচারি, পরিবহণ ও নির্মাণ সহ বিভিন্ন ট্রেডের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক পওয়ার বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সকল ক্ষেত্রেই ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে। মূলত একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্চ মোকাবেলায় এর কোন বিকল্প নেই। সকল ট্রেড পেশায় ইউনিয়ন গঠনের প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রেই যুতসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে থানায় থানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা সময়ের সচেয়ে বড় দাবি। ‘মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই আলোচনা ও সমঝোতায় সমাধান চাই’ নীতি অনুসরণ করতে হবে এবং শ্রমিকদের সংগঠিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে গণমানুষের কল্যাণে শ্রমিকদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের বৃহত্তর ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, দেশের শ্রমিক সমাজ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষিত রেখে কোনভাবেই জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সমৃদ্ধ জাতি ও দেশ গড়তে শ্রমিকদের নায্য অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। আর শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হলে ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা ও পরিসর সম্প্রসারণ করতে হবে। সুষ্ঠু ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর এজন্য অবশ্যই সম্মিলিত প্রয়াস চালানো দরকার। ইসলাম মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। আর দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সকলকে ইসলামী আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে হবে। তিনি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে জীবন গঠন করতে শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান।
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের সম্পর্কে অনেক কথা বলা হলেও কোন সরকারই শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করেনি। বরং প্রত্যেক সরকারের আমলেই শ্রমিকরা থেকেছেন অধিকার বঞ্চিত। মূলত ইসলামী শ্রমনীতিই পারে শ্রমিকদের নায্য অধিকার নিশ্চিত করতে। কিন্তু দেশে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠত না থাকায় শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী এখনও নিশ্চিত হয়নি। মূলত দেশে দেশে অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত না হওয়ায় শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটছে না। শুধু শ্রমিকরাই নয় বরং এ সরকারের আমলে দেশের সকল শ্রেণির মানুষই এখন অধিকার বঞ্চিত। তাই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক-জনতা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন একটি কল্যাণধর্মী ও ব্যক্তিক্রমী শ্রমিক সংগঠন। আমাদের এ সংগঠন গতানুগতিক ধারার কোন সংগঠন নয় বরং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সদা সচেষ্ট। তাই অধিকার আদায়ে সকল শ্রমিক সংগঠনকে ফেডারেশনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।