বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ১৯৫২’র ভাষা শহীদরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মোৎসর্গের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। মূলত তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে ভাষার ভিত্তিতে বিভক্ত করতে চেয়েছিল। যা মোটেই বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক ছিল না। আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকের সুরা রুমের ২২ নং আয়াতে বলেছেন, ‘আকাশমালা ও জমিনের সৃষ্টি, তোমাদের পারস্পরিক ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্র্য তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনসমূহের মধ্যে বড় নির্দশন’। তিনি ভাষা শহীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, মহানগরী উত্তরের মজলিশে শূরা সদস্য এস কে মজুমদার, হোসাইন আহমদ, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।
সেলিম উদ্দীন বলেন, মহান একুশের চেতনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের উন্মেষ ঘটে। ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম নেতৃত্বাধীন তমুদ্দন মজলিশের মাধ্যমে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও মহান ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ডাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলেনর অন্যতম পুরোধা। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর জিএস হিসাবে লিয়াকত আলীর খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। মূলত ইসলমপন্থীরাই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে। কিন্তু মহলবিশেষ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করে প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার পরিবর্তে তাদের কাউকে কাউকে অবমূল্যায়ন করছে। মূলত যে জাতি গুণিজনের কদর করে না, সে জাতির মধ্যে গুণিজন জন্মায়ও না এবং সে জাতি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাবান জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের যথাযথ সন্মান প্রদর্শনের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথায় বলা হয়। কিন্তু ভাষার উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধনে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করলেও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে এখনও বাংলা ভাষার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। দেশের আইন-আদালত, চিকিৎসা শাস্ত্র, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ক প্রকাশনাগুলো এখনও বাংলা ভাষায় রচনা বা অনুবাদ করা হয়নি। ফলে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা এখনও উপেক্ষিত। মূলত ভাষা ও সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু আমরা বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতিতে ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তা রীতিমত ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের ভাষা, সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। তিনি সকলকে এই হীনম্মন্যতা পরিহার করার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, মূলত ভাষা আন্দোলনের চেতনা অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন সংগ্রাম, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও সাম্যের চেতনা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রন্ত হলেও আমরা সে লক্ষ্যে এখন পৌছতে পারিনি। বিজাতীয় আগ্রাসনে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আজ অরক্ষিত। তাই মায়ের ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মূলত একুশের চেতনা ধারণ করেই দেশ থেকে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও অগণতান্ত্রিক শক্তিকে রুখে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মহান একুশের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আলোচনা সভা শেষে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।