বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রোহিঙ্গারা মুসলমান বলেই তাদের উপর শতাব্দীর সবচাইতে নির্মম ও নিষ্ঠুর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্মী বর্গীরা আরাকান রাজ্যে যে গণহত্যা চালাচ্ছে তা অতীতের সকল নৃসংশতাকে হার মানিয়েছে। বাস্তুহারা, স্বজনহারা ও আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। তাই রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ, ওআইসি, আবরলীগ ও সার্কসহ বিশ্বসংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিশ্বরোড সংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্র ঘোষিত ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রূহের মাগফিরাত কামনায় গায়েবা জানাজা ও আহত-আশ্রহীনদের কল্যাণ কামনায়’ দোয়া কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত গায়েবানা জানাজা উত্তর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা, শুরা সদস্য এ কে মজুমদার, জামায়াত নেতা এম এ বাশার, কামাল উদ্দিন, এম এ রহমান ও মো. কুতুব উদ্দীন, ছাত্রনেতা তরিকুর ইসলাম ও ইমরান হোসেন প্রমূখ। পরে তিনি উপস্থিত সকলকে সাথে নিয়ে নিহত, আহত ও বিপন্ন রোহিঙ্গাদের কল্যাণ কামনায় দোয়া এবং মুনাজাত পরিচালনা করেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, নিরাপরাধ রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমার বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা নির্মম নিধনযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো তাদের রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। বরং পরোক্ষভাবে অনেকেই হত্যাযজ্ঞকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সৈন্য ও সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসায় আগুন দিয়ে গণলুটপাট চালাচ্ছে। তারা নারীদের গণধর্ষণ করছে। তাদের জিঘাংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নিরাপরাধ শিশু ও বৃদ্ধরাও। রোহিঙ্গাদের কুপিয়ে, জবাই ও গুলী করে এবং নির্দয়ভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মূলত রোহিঙ্গারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই তাদের ওপর ইতিহাসের নির্মমতম নিধযজ্ঞ চলছে। কিন্তু বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু কথাবর্তা বললেও বাস্তবে তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় তাদেরকে মানবিক সাহায্য সহ সরকারকে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। সরকার প্রায়ই দাবি করে থাকে যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বর্তমান সংকটকালীন সময়ে সরকারের এ দাবির বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চায় দেশের জনগণ। কারণ, ‘বিপদেই বন্ধু চেনা যায়’। এজন্য দরকার সরকারের জোড়ালো ও বলিষ্ঠ কুটনৈতিক পদক্ষেপ। মূলত রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। কারণ, জাতীয় বিভক্তি রেখে এ ধরনের সমস্যা সমাধান কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ। তিনি চলমান সমস্যা সমাধানে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিছক কোন রাজনৈতিক দল নয় বরং একটি কল্যাণকামী আন্দোলন ও সংগঠনের নাম। জামায়াত যেকোন জাতীয় দুর্যোগসহ আর্ত-মানবতার কল্যাণে এবং নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। মানুষের জন্য জামায়াতের কল্যাণকামীতা অতীতেও ছিল, এখনও আছে এবং আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে-ইনশা আল্লাহ। আর আর্ত-মানবতার কল্যাণকামীতার অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের কল্যাণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যার্থে আরও কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে সরকার, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দাতা সংস্থা এবং সমাজের বিত্তবান মানুষদের প্রতি আহবান জানান।
মোহাম্মদপুর জোন: কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মিয়নমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের হামলায় নিহত রোহিঙ্গা মুসলমানদের মোহাম্মদপুর জোনের উদ্যোগে মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ী মসজিদ প্রাঙ্গনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গায়েবান জানাজা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য ডা. শফিউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, শেরেবাংলা নগর থানা সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল আযম, আদাবর সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান, দারুসসালাম সেক্রেটারি আবু রাইহান ও শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিম সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম প্রমূখ। পরে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এছাড়াও উত্তরা, মিরপুর, রমনা জোনে নিহত রোহিঙ্গাদের জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গায়েবানা জানাজায় হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।