সাধারণ মানুষের মধ্যে যেসব নিয়ে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা বাড়ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য। কম আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে না পেরে তারা হতাশ। সংগত কারণেই তারা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তাই ক্ষমতাসীনদের জন্য এটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আমনের ভরা মৌসুমে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বাড়ছে। পবিত্র রমযানের আগে আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কিছু উদ্যোগ নিলেও সুফল দেখা যাচ্ছে না।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন দুর্বল উদ্যোগে বাজার ভোক্তাদের নাগালে আসবে না। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এরপরও জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কেন, তা সংশ্লিষ্টরা বুঝতে অক্ষম।
পত্র-পত্রিকার খবর অনুসারে, হুট করেই চালের দাম ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। পরে অবশ্য প্রশাসনের নানামুখী তৎপরতায় পাইকারি পর্যায়ে বস্তাপ্রতি দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমলেও খুচরা পর্যায়ে তার কোনও প্রভাব নেই। অন্যদিকে পবিত্র রমযান মাস আসতে আর মাত্র মাস দেড়েকের মতো বাকি। এরই মধ্যে বাজারে ডাল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ রমযানে চাহিদা বেশি এমন প্রতিটি জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। রমযান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি শুল্ক হ্রাস করবার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান নিজেই এমন তথ্য জানিয়েছেন। কিন্তু তাতেও বাজার স্বাভাবিক হয়নি। হবার আলামতও নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার অস্থির হয় মূলত ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সিন্ডিকেট ও মজুদদারির ফলে। তাদের অতিমাত্রায় লোভের বলি হয় সাধারণ মানুষ। এর প্রমাণ অতীতে বারবার পাওয়া গেছে।
প্রতিবেশী দেশে যেদিন ঘোষণা দেয়া হয় যে, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা হবে কিংবা দাম বাড়ানো হবে, সেদিনই আমাদের দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। কোনও কারণে পরিবহন বাধাগ্রস্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দাম বাড়ে। এখানে নীতি-নৈতিকতা কোনও কিছুই কাজ করে না। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দায় অভিযান চালিয়ে দুটো গুদাম থেকে সোয়া দুই কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার ভোগ্যপণ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো অবৈধভাবে মজুদ করা হয়েছিল। খোঁজ করলে সারাদেশে এ রকম অনেক অবৈধ মজুদ পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অভিযান চালানোর প্রয়োজন আছে বৈকি। একই সঙ্গে দরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও তা মেনে চলতে বাধ্য করা। সবচেয়ে বেশি দরকার, বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা। সে জন্য সময়মতো আমদানির উদ্যোগ নেয়া।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে রমযান মাসসহ বিভিন্ন পার্বণে ভোগ্যপণ্যের মূল্য হ্রাস করা হয় যাতে ভোক্তারা সহজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে উৎসবাদি উদযাপন করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় এর উল্টো। এ ছাড়া আরেকটি প্রবণতা এখানে দেখা যায়, অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত পণ্য কেনার হিড়িক পড়ে। এমন মানসিকতা আমাদের পরিহার করতে হবে।