গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, সরকার দেশের সড়ক-মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দাবি করা হচ্ছে, আদায়কৃত টোলের অর্থ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন, সড়ক মেরামত ও রক্ষাণাবেক্ষণের কাজে ব্যয় করা হবে। এজন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণও দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা ‘কিসে আর কিসে, ধানে আর তুষে’র সাথেই তুলনা করছেন বোদ্ধামহল। কারণ, যেসব দেশে সড়ক-মহাসড়কে টোল আদায় করা হয়, সেসব দেশে সাধারণের চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা রয়েছে। তারা বিনা টোলে সেসব রাস্তা দিয়ে নির্বিঘেœ চলাফল করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে সে ধরনের সুবিধা বা অবকাঠানো এখনো নেই। আর সড়কে টোল আদায় করা হলেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে সে কথাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই সড়কে টোল আদায় করা হলে তা জনগণের ‘গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়া’ হয়ে দেখা দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আমাদের দেশে সাধারণত সেতু পারাপারে যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করা হয়। সর্বশেষ মহাসড়কে যান চলাচলেও টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে টোলের পরিমাণ নির্ভর করবে সড়কের শ্রেণিভেদে। এ ছাড়া ‘টোল সমন্বয়’ শিরোনামে প্রতিবছর নতুন হারেও টোল নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই টোল আদায়ের একটি নীতিমালা তৈরি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বিষয়টিকে কেউ সঙ্গত, কাক্সিক্ষত ও স্বাভাবিক মনে করছেন না।
অবশ্য সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বহনের লক্ষ্যেই এই টোল বা পথশুল্ক আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে করে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যয়ই শুধু বাড়বে না; পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে-তথা আর্থিক প্রভাব পড়বে সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয়েও। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ভাষ্য, রাস্তা ভালো থাকলে পণ্য পরিবহন বরং সহজ হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে তা তিনি কোনভাবেই স্বীকার করতে চাচ্ছেন না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা সংশোধন করে নতুন করে খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার। বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে টোলহার নির্ধারণ পদ্ধতিতে। প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী ‘টোল সমন্বয়ের’ মাধ্যমে প্রতিবছর নতুন হারে টোল নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে করে সড়কে টোলপ্রথা চালুর আগেই টোল বৃদ্ধির পথ প্রসারিত করা হলো। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতে টোল বা পথশুল্ক আদায় করা হবে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় বিষয়টিকে কেউই যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত মনে করছেন না বরং এতে জনদুর্ভোগ বাড়ারই রীতিমত আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও সড়কে টোল দিতে হয়। এখানেও টোল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর সমন্বয় করতে হবে। সব কিছুর খরচ বেড়েছে। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই টাকা আমরা কোথা থেকে পাব? তাই টোল তো দিতেই হবে’। তা হলে আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘পণ্যের দাম বাড়বে কেন? রাস্তা ভালো থাকলে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। তবে পয়সা খরচ হবে সড়ক চলাচলে’। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে সাধারণ মানুষ মোটেই সন্তষ্ট হতে পারছেন না বরং বিষয়টিকে অযৌক্তিক ও দায়সারা বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন নিডস রিপোর্ট ২০২২-২৩ অনুযায়ী-সড়ক, সেতু ও কালভার্ট মেরামতের জন্য চলতি অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার চাহিদা ছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রতি বছরই যে আর্থিক চাহিদা দিয়ে থাক, তা পূরণ করতে পারে না সরকার। তাই চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকে সড়কেও টোল আদায়ের নির্দেশনা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এমনটিই দাবি সরকার সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় টোলহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে যুক্ত করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচককে। ফলে ‘ভিত্তি টোলে’ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রতি বছর বাড়বে টোলহার। এ জন্য খসড়া নীতিমালায় ‘টোলহার নির্ধারণ’ এই শব্দবন্ধকে ‘টোলহার সমন্বয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় সংযোজন করা হয়েছে সীমান্ত সড়কও।
নতুন নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ‘ভিত্তি টোল’ নির্ধারণ করা আছে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা। একইভাবে জাতীয় মহাসড়কের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা, আঞ্চলিক মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা, সীমান্ত মহাসড়কে ১ টাকা, জেলা মহাসড়কে ৫০ পয়সা ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা আছে। এটি হচ্ছে ‘গ’ শ্রেণির (মিডিয়াম ট্রাক) যানবাহনের ক্ষেত্রে। ‘ক’ শ্রেণির (ট্রেইলার) ক্ষেত্রে এ হার ২৫০ শতাংশ এবং ‘খ’ শ্রেণির ক্ষেত্রে (হেভি ট্রাক) ২শ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ‘ঘ’ শ্রেণিতে পড়েছে বড় বাস এবং ‘ঙ’ শ্রেণিতে মিনি ট্রাক।
প্রস্তাবিত নীতিমালার টোলহার সমন্বয়ের সূত্র প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি কার্যকর হলে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের সর্বশেষ প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ে/গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কের ভিত্তি টোল হবে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৩ পয়সা। একইভাবে জাতীয় মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৮২ পয়সা, আঞ্চলিক ও সীমান্ত মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ২২ পয়সা ও জেলা মহাসড়কের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি টোল হবে ৬১ পয়সা। সড়কের পাশাপাশি সেতুর ভিত্তি টোলও পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আদায়কৃত টোল জমা হবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে। প্রয়োজনে টোল আদায়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, টোলের সংশোধিত খসড়া নীতিমালায় ‘টোলহার নির্ধারণের সূত্র’ বাদ দিয়ে ‘টোলহার সমন্বয়ের সূত্র’ সংযোজন করা হয়েছে। নতুন সূত্রটি হলো ‘সমন্বয়কৃত টোল=ভিত্তি টোল + (বর্তমান অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক-ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক)/ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক (গুণ) ভিত্তি টোল (গুণ) ০ দশমিক ৩০। টোলহার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালকে ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আর বিদ্যমান অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক হিসেবে ধরা হবে সর্বশেষ প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচককে।
সরকারের পক্ষ থেকে দেশের মহাসড়কগুলো থেকে টোল আদায়ের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সড়ক ব্যবহারে টোল দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশে কেন নেওয়া হবে না? টোল থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়েই সারা বছর সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের টোলব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা যায়, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সড়ক-মহাসড়কে টোলব্যবস্থা বহুদিন ধরে চলে আসছে। তবে সাধারণ জনগণের জন্য বিকল্প সড়ক রেখে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এছাড়া টোলযুক্ত মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
সাধারণত বিদেশে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্রিওয়ে নির্মাণের পর টোল আদায় করে সেই টাকা তুলে নেয়। এছাড়া একটি স্টেট বা প্রোভিন্স থেকে অন্য স্টেট বা প্রোভিন্সে প্রবেশ করার সময় টোল দিতে হয় সরাসরি সরকারকে। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম হচ্ছে, সরকারনিয়ন্ত্রিত সড়কে কোনো টোল দিতে হয় না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার যানবাহনের লাইসেন্স থেকেই ট্যাক্স আকারে সড়ক ব্যবহার বাবদ অর্থ নিয়ে নেয়। যেমন বাংলাদেশ সরকারকেও গাড়ির লাইসেন্স ও তা নবায়নের সময় সড়ক ব্যবহারের ট্যাক্স প্রদান করা হয়। সাধারণত ইউরোপ, আমেরিকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সড়ক ও উড়ালসেতুর ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়। সাধারণ জনগণ সরকারি সড়কে চলাফেরা করে। আর যারা বেশি টাকা ব্যয় করতে সক্ষম, তারা যানজটমুক্ত হয়ে দ্রুত যাওয়ার জন্য বেসরকারিভাবে নির্মিত সড়ক বা উড়ালসেতু ধরে যাতায়াত করে। এজন্য তারা টোল দেয়। কিন্তু সরকারি সড়কের ক্ষেত্রে কোথাও জনগণকে টোল দিতে হয় না। এসব সড়কে কিছুটা যানজট থাকে; থাকে সিগন্যাল। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সড়কগুলো মূলত ফ্রিওয়ে। যে সড়কে কোনো সিগন্যাল থাকে না। যা দিয়ে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। কারণ বড়ো অঙ্কের টোল গুনে সবাই ফ্রিওয়েতে ওঠে না। যেখানে টোল দিতে হয়, তার আশপাশে অবশ্যই টোলবিহীন বিকল্প সড়কও থাকে, যা দিয়ে সাধারণ জনগণ যাতায়াত করে।
আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতেও টোলব্যবস্থা আছে, এটা যেমন ঠিক, তেমনি একই সঙ্গে আমাদের বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে সে দেশের অনেক বড়ো বড়ো সেতু সম্পূর্ণ টোলমুক্ত। দুবাই-সিঙ্গাপুরের রাস্তায় টোল দিতে হয়। টোল দিতে হয় জাপানের রাস্তা ও ফ্লাইওভারেও। কোরিয়াতে শুধু টোল দিতে হয় হাইওয়েতে। যারা টোল দিতে না চায়, তারা লোকাল (বিকল্প) রাস্তা নির্বাচন করতে পারে। যানজটমুক্ত অনেকগুলো লেনের কারণে বেশিরভাগ মানুষ এখানে টোল দিয়ে হাইওয়েকেই নির্বাচন করে। এই টাকাটা তারা দেয় বিশেষ সুবিধা ভোগের জন্য; স্বাভাবিক চলাফেরার জন্য নয়।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের হাইওয়েতে কোনো টোল নেই। ইতালিতে হাইওয়েতে টোল আছে কিন্তু বড়ো শহরের মধ্যে ঢুকতে-বেরোতে ১০-২০ কিলোমিটার ফ্রি। যেমন ভেনিস, মিলান। ফ্রান্সেও এমনই। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অধিকাংশ ফ্রিওয়েতে টোল দিতে হয় না। টোলযুক্ত হাইওয়েগুলো করার মূল উদ্দেশ্য হলো, দূরের শহরে যেতে যেন থামতে না হয় অর্থাৎ ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত রাস্তা। এসব রাস্তায় সর্বোচ্চ গতি ১৩০ কিলোমিটার। পাশাপাশি টোল ফ্রি রাস্তা আছে, যা দিয়ে সব শহরেই যাওয়া যায়। এসব রাস্তাও অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত, তবে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৯০ কিলোমিটার।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুই ধরনের সড়ক আছে একটি হাইওয়ে, অন্যটি ফ্রিওয়ে। হাইওয়েতে সিগন্যাল থাকে, কিন্তু ফ্রিওয়েতে থাকে না। ফ্রিওয়েতে টোল দিতে হয়। ফ্রিওয়েগুলো মূলত বাইপাস আকারে থাকে। সরাসরি শহরে প্রবেশ করে না। শহরের পাশে নেমে হাইওয়ে ধরে শহরে প্রবেশ করতে হয়। নিউজার্সি ও নিউইয়র্ক স্টেটকে ভ্যারাইজনি ব্রিজ যুক্ত করেছে। নিউজার্সি থেকে নিউইয়র্ক গেলে ব্রিজের কাছে নিউজার্সি স্টেট গভর্নমেন্টকে ১৪ ডলার টোল দিতে হয়। আবার নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সি আসার পথে ব্রিজের কাছে ১৫ ডলার টোল দিতে হয়, যা পায় নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নমেন্ট।
জানা গেছে, ওয়াশিংটন থেকে নিউজার্সি যেতে ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়াসহ চারটি স্টেট অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি স্টেটের বর্ডারে সংশ্লিষ্ট সরকারকে টোল দিতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ধরনের ব্যবস্থা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, অধিকাংশ দেশেই রয়েছে। আর টোল দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে দুই ধরনের ব্যবস্থা ‘ইজি পাস’ ও নগদ প্রদান। ‘ইজি পাস’ থাকলে এক্সপ্রেসওয়েতে কোথাও থামতে হয় না। গাড়ির ড্যাসবোর্ডে ‘ইজি পাস’ রাখা থাকে। টোল প্লাজায় স্থাপিত সেনসর সেখান থেকে টাকা কেটে নেয়।
দেশে মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টোল আদায়ের আগে মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। এজন্য মহাসড়কে ধীরগতি ও দ্রুতগতির গাড়ির পৃথক লেনের দরকার হবে। স্বল্প দূরত্বের গাড়ির জন্য পৃথক সার্ভিস লেনের প্রয়োজন হবে। আর জনগণের টাকায় নির্মিত সড়কে জনগণ চলাচল করবে। সেখানে কেন সরকার টোল আদায় করবে? আর সড়কে যেসব গাড়ি চলে, সব গাড়িই তো সরকারকে ট্যাক্স দেয়। তারা তো প্রকারান্তরে টোল নিয়েই নিচ্ছে।
সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মহাসড়কের সেতু ও সড়ক থেকে টোল আদায়ের নিয়ম ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তবে তা এমনভাবে নয় যে সবাইকে দিতেই হবে। গরিব জনসাধারণের জন্য বিকল্প সড়ক রাখতে হবে। আমাদের দেশে যদি সেবা দেওয়া নিশ্চিত করা হয়, তাহলে আরো কিছু ক্ষেত্রে টোল আদায় করা অযৌক্তিক নয়। তবে একসঙ্গে টোল আদায় করলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বহন করা কষ্টকর হবে। আর এ টোল আদায় করাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজরা সংগঠিত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সেতু এবং ফ্লাইওভারে চলাচলের জন্য যানবাহনের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হারে টোল দিতে হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় সারাদেশে সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-রংপুর এসব মহাসড়কেই সরকার টোল আদায়ের কথা বলছে। কিন্তু চলাচলকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের আগে তা কোন মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না বরং বিষয়টিকে দুর্মূল্যের বাজারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর পরোক্ষ করারোপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
টোল আদায়ের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রসঙ্গ টেনে আনা হলেও যেসব দেশের সড়ক-মহাসড়কে টোল আদায় করা হয় সেসব দেশে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য টোলমুক্ত বিকল্প রাস্তাও রয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা সে সব টোলমুক্ত রাস্তা দিয়েই নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন। মূলত, টোলযুক্ত রাস্তাগুলো বিষেশায়িত ও ভিআইপি সড়ক। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের কোন বিকল্প অবকাঠামো তৈরি না করেই রাস্তায় টোল আদায় কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ, এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে; ঘটবে মূল্যস্ফীতি। বৃদ্ধিপাবে চাঁদাবাজিও। তাই সড়ক-মহাসড়কে টোলের বোঝা চাপানোর আগে দেশে বিশ্বমানের যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করা দরকার। অন্যথায় তা জনদুর্ভোগের কারণ হবে।