সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ৭ জানুয়ারির ভোটের পর হতে গত প্রায় এক মাসে চট্টগ্রামের বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর সরকারের হুমকি-ধমকিতে ‘কমেছে’ ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত, যা রীতিমতো ভোক্তাদের সাথে তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চাল ব্যবসা নিষিদ্ধ না করলে চালের বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এ ছাড়া ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে সব ধরনের ডাল, মসলা, আটা-ময়দা, ডিমসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেভাগেই বেশ বাড়িয়ে রেখেছে খেসারি আর চানার দাম। বেড়েছে দেশী পেঁয়াজের ঝাঁজ। মাছ-গোশতের বাজারে যেন আগুন। ছোট তরকারির চিংড়িও (লইল্লা) প্রতি কেজি ৭৫০- ৮০০ টাকার উপরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হতেই প্রতি নিয়ত বেড়ে চলেছে সব ধরনের চালের দাম। সিদ্ধ চাল সর্বনিম্নমানের ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা এবং মাঝারি মানের সিদ্ধ চাল বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। মাঝারি মানের হাফ সিদ্ধ ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ টাকা। মাঝারি মানের কাটারীভোগ আতপ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫০টাকা থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি মানের মিনিকেট আতপ চাল ৫০ কেজি ২৯০০ এবং ২৫ কেজি ১৪৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন মানের ৫০ কেজির ইরি আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা বস্তা। চিনিগুঁড়া আতপ চাল গতকাল ২৫ কেজির বস্তা সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
একাধিক ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল ব্যবসা নিষিদ্ধ করা ছাড়া চালের বাজার সরকার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। ব্যবসায়ীরা জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত করে বিক্রির জন্য দেশে উৎপাদিত চালের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মজুদ করে রাখেন। পরে ইচ্ছা মতো দাম নির্ধারণ করেন। প্যাকেটজাত চাল ব্যবসা বন্ধ করলে দ্রুতই চালের বাজার সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে বলেও তাদের ধারণা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোটের পর হতে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ব্যবহার্য ডালের মধ্যে মুগডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা পর্যন্ত। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, যা ভোটের আগে ছিল ১৪৫ টাকা। গতকাল খেসারি ডাল ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা ভোটের আগে ছিল ৯০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ টাকা, মটর ডাল ৭৪ টাকা এবং মসুর ডালের মধ্যে মোটা জাতের ১১০ টাকা এবং সরু জাতের দেশীয় মসুর ডাল ১৪৪ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
চিনির দাম কমার কথা বাজারে চালু থাকলেও ভোটের আগের অবস্থানে ফিরেনি। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ছয় হাজার ৭৪০ টাকায় এবং খুচরায় কেজি প্রতি ১৩৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ভোটের আগে ছিল কেজি প্রতি ১৩৫ টাকা।
আদা ও রসুন গতকাল প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। অতি প্রয়োজনীয় উভয় ধরনের মসলার দাম কমলেও আগের অবস্থায় ফিরেনি। দেশী পেঁয়াজ গতকাল পাইকারি বাজারে ৮৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে আকার ভেদে ৯০-১০০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০-১২০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়।
মাছ-গোশতের দিকে সাধারণ মানুষ তাকাতেও হিমশিম খাচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামের বাজারে গরুর গোশত কেজি প্রতি ৯০০ টাকা এবং হাড়সহ ৮০০ টাকা দরে, দেশীয় জাতের মুরগি কেজি প্রতি ৫৫০টাকা, প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
এ ছাড়া ডিমের দামেও স্বস্তি নেই। গতকাল প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ১৩৮ টাকা, সাদা ডিম-১৩৫ টাকা এবং হাসের ডিম ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে সাধারণ মানুষের বাজারের হিসাব মিলাতে নাভিশ্বাস উঠছে। কয়েক দিনে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও।