বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি জননেতা ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, রহমত , মাগফিরাত ও নাযাতের মহিমান্বিত মাস পবিত্র মাহে রমজান বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমরা এ মাসের মাহিমাকে কাজে লাগিয়ে কতখানি তাকওয়া অর্জন ও আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পেরেছি তা এখন আত্মসমালোচনা করে দেখার সময় এসেছে। তিনি পবিত্র মাহে রমজানের প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে আত্মগঠন ও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আজ লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির লক্ষ্মীপুর শহর শাখা আয়োজিত এক ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। শাখা সভাপতি ফুয়াদ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাষ্টার রুহুল আমীন ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ড. করিম বলেন, ঈদ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। ঈদের দিনে মুসলমানরা ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে জমায়েত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন; জামায়াতবদ্ধ হন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য। ঈদের অনাবিল আনন্দে মুসলিম উম্মাহ শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত শান্তির সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেন। কিন্তু সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারি মনোবৃত্তির কারণেই এবারের ঈদ উৎসব মুখর ও আনন্দঘন হতে পারেনি। সিয়াম সাধনা ও ঈদ পালন নির্বিঘ্ন এবং উৎসব মুখর করার দায়িত্ব সরকারের হলেও সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি বরং সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। জনগণের ক্রমক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সিয়াম পালন ছিল রীতিমত কষ্টসাধ্য। রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল না। তাই এবারের ঈদের আনন্দ ছিল অনেকটাই ম্লান।
তিনি বলেন, সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিরাজনীতিকরণের পথ বেছে নিয়েছে। ফলে বিরোধী দলের উপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা এবং এনকাউন্টারের নামের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত পবিত্র মাহে রমজানও এ থেকে মোটেই আলাদা ছিল না। সিয়ামের মাসেও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের জিঘাংসা থেকে রেহাই পায়নি পর্দানশীন নারীও। তাই এবারের ঈদ সার্বিক ও সার্বজনীনভাবে উৎসব মুখর হয়ে ওঠেনি। মূলত এ সরকারের যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন জনদুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। তাই জনগণের মুক্তি ও ঈদ সহ ধর্মীয় উৎসবগুলোকে অর্থবহ করতে হলে জুলুমবাজ সরকারের পতনের কোনই বিকল্প নেই। তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ না করে গণবিরোধীতায় লিপ্ত হয়েছে। হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে গণবিরোধী বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে অযৌক্তিকভাবে করারোপ করা হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। ব্যাংক হিসাবের উপর অনাকাঙ্খিতভাবে আবগারী শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে এবং ব্যাংকিং সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল স্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানান।