পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে এক শুভেচ্ছা বাণীতে মহানগরী আমীর বলেন, বছর ঘুরে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ ‘ঈদুল ফিতর’। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দধারা। আমাদের জাতীয় জীবনেও ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। একমাস সিয়াস সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলিম উম্মাহর প্রতি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক মহানিয়ামত। ঈদুল ফিতরের দিনে মুসলমানরা মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে জমায়েত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন; জামায়াতবদ্ধ হন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য। ঈদের অনাবিল আনন্দে মুসলিম উম্মাহ শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত শান্তির সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেন। তাই ঈদুল ফিতরের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও নাযাতের বারতা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছিল মহিমান্বিত মাস মাহে রমযান। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাতে পবিত্র মাহে রমযানে যথাযথ ও নির্বিঘ্ন সিয়াম সাধনা ও কিয়াম পালন করতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান করার দায়িত্ব ছিল মুলত সরকারের। কিন্তু সরকারের ইসলামবিরোধী ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই ধর্মপ্রাণ মানুষের সিয়াম ও কিয়াম নির্বিঘ্ন হতে পারেনি। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও সিয়াম সাধনাকে সফল এবং স্বাার্থক করতে সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব হলেও তারা সে দায়িত্ব পালন করেনি বরং প্রকারান্তরে বাধার সৃষ্টির করা হয়েছে। জামায়াত আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ন্যাক্কারজনকভাবে বাধা সৃষ্টি সরকারের ইসলাম বিদ্বেষই প্রমাণ করে। মূলত সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু মনোবৃত্তির কারণেই পবিত্র রমজান মাসে গণদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যা চালিয়ে দেশকে পরিকল্পিভাবে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার ফ্যাসীবাদী ও স্বৈরাচারি কায়দায় বিরোধী মতকে দমন করছে। বিরোধী দলীয় নেতাদের গাড়ীবহরে সন্ত্রাসী হামলা সরকারের সে ফ্যাসী ও বাকশালী মানসিকতার পরিচয় বহন করে। সরকারের সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই গোটা দেশই এখন অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পবিত্র রমযান মাসে দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ যখন সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিল, কিন্তু সরকারের ফ্যাসীবাদী আচরণ জনগণকে রীতিমত হতাশ করেছে। যা কারো কাম্য ছিল না।
মহানগরী আমীর বলেন, জুলুমবাজ ও গণবিরোধী সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ না করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই গণবিরোধীতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে জাতীয় সংসদে গণবিরোধী বাজেট পেশ করেছে। ঘোষিত বাজেটে সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিতভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মূল্য পরিস্থিতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানের নির্বাচনী অঙ্গীকার করলেও এখন মোটা চালের মূল্য ৫০ টাকারও বেশী। মূলত জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলেও লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে করারোপ করেছে এবং ব্যাংকগুলো উচ্চহারে আবগারী শুল্কের আওতা বৃদ্ধি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও সরকার দুর্গত মানুষের কল্যাণে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং বিরোধী দলকে অনাকাঙ্খিতভাবে দায়ি করে দায় এড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। সঙ্গত কারণেই এবারের পবিত্র মাহে রমযান যেমন গণমানুষের কাছে নির্বিঘ্ন হয়নি, ঠিক তেমনিভাবে ঈদের আনন্দটাও অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। তাই জাতীয় জীবনে ঈদকে অর্থবহ ও আনন্দঘন করতে হলে ফ্যাসীষ্ট সরকারের পতনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি মাহে রমযানের তাৎপর্য ও ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ধারণ করে ফ্যাসিবাদ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এবং সকল স্তরের নগরবাসীর প্রতি পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।