ফের অস্থির মাংসের বাজার। নির্দিষ্ট দরে বিক্রি হচ্ছে না গরুর মাংস। বাজারভেদে নির্ধারিত হচ্ছে মাংসের দর। আবার একই দোকানে এক কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে তিনটি আলাদা দরে। সবমিলে বাজারে এককেজি গরুর মাংস কোথাও ৬৫০ টাকা, কোথাও ৭৫০ টাকা আবার কোথাও বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকাতেও। তবে কম দামে মাংস বিক্রি করায় প্রাণ নাশের হুমকিও পেয়েছেন এক মাংস ব্যবসায়ী। ক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির জন্য মাংসের দাম বেড়েছে।
ভোটের আগে হু হু করে কমতে শুরু করে মাংসের দাম। তখন ৬০০ টাকার নিচে বিক্রি হয় এককেজি গরুর মাংস, আবার কোথাও বিক্রি হয় ৮০০ টাকায়। অস্থিতিশীল বাজার দেখে সংশ্লিষ্ট পক্ষ নিয়ে ৬৫০ টাকা প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারিত করে দেয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একমাস সেই দর কার্যকর থাকলেও ভোটের পর থেকে ফের বাড়তে থাকে দাম।
খিলগাঁও বাজারের সিয়াম মাংস বিতানে তিন রেটে বিক্রি হয় গরুর মাংস। দোকানের কসাই মঞ্জু বলেন, আমি ৭০০, ৭৫০ আবার ১০০০ টাকাও বিক্রি করি। কীভাবে এই দরে মাংস বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাড্ডি, চর্বি মিক্স মাংস নিলে ৭০০ টাকা কেজি। চর্বি ছাড়া নিলে ৭৫০ টাকা কেজি। আর যদি চর্বি, হাড্ডি ছাড়া নেয় তাহলে ১০০০ টাকা কেজি। যারা ৬৫০ টাকা বিক্রি করে তারা সবকিছু মিক্স করেই বিক্রি করেন। আরেক বিক্রেতা জানান, সকালে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। এখন ২-৩ কেজি আছে। এগুলো ৭০০ টাকা করে বিক্রি করে চলে যাবো।
এদিকে কাওরানবাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, মহল্লার ৭৫০ টাকা বিক্রি করলেও এটি বড় বাজার হওয়ায় কমে বিক্রি করতে হয়। এক কসাই বলেন, আমরা ৭০০ টাকা বিক্রি না করলে পোষায় না। মহল্লার আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করে। কিন্তু ৬৫০ টাকাও মাংস বিক্রি করছে তারা লাভ ছাড়া বিক্রি করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সবকিছু মিক্স করে বিক্রি করে। এতে দাম কম পড়ে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যানার টাঙিয়ে ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছে শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতান। কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করায় ব্যবসায়ী মো. খলিলকে ও তার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মাংস ব্যবসায়ী খলিল শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। খলিল বলেন, আমার বেশি বিক্রি হয় তাই ৬৫০ টাকা বিক্রি করেও লাভ করতে পারছি। তাছাড়া এখন গরুর দাম স্বাভাবিক তাই এই দামে বিক্রি করা যাচ্ছে। প্রতিদিন ১০-১২টা গরু বিক্রি করতে পারছি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিমাণ বাড়ে। খলিল মাংস বিতানে আসা এক ক্রেতা বলেন, খিলগাঁও থেকে ঘুরে এখানে এসেছি কম দামে মাংস নেয়ার জন্য।
ভোক্তারা বলছেন, বাজারে গরুর মাংসের দাম নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। মাংসের দাম কমার সময় সেটাকে কমতে না দিয়ে ৬৫০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন আবার তা আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে গরুর মাংস। সবুজ নামের এক ক্রেতা বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে কি এমন হলো যে কেজিতে ১০০টাকা বেড়ে গেল মাংসের দাম। এটা একটা সিন্ডিকেট। এভাবে দাম বাড়লে তো আমরা ৬ মাসেও একবার গরুর মাংস খেতে পারবো না। মাংস কিনতে আসা রনি মিয়া বলেন, দাম কমার কারণে গতমাসে ২ কেজি গরুর মাংস কিনেছি। কিন্তু এখন তো দাম বেশি। এককেজি মাংস ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে তা রান্না করতে আরও ৩০০ টাকার মশলা খরচ হয়। এককেজি মাংস একবেলা খাওয়ার জন্য ১০০০ টাকা খরচ করা তো সাধ্যের বাইরে। ইচ্ছা হলেও মাংস কিনে খেতে পারি না।