নাটোরের সিংড়ায় শুক্রবার বেলা ১১টায় পৌর যুবলীগের সভাপতি জনি হাসান লাবুর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে মিছিল থেকে সিএনজি-চালিত অটোরিকশা পরিবহণ মালিক সমিতির অফিস ভাঙচুর ও দখলের ঘটনা ঘটেছে। সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনার পর মিছিলকারীরা প্রকাশ্যে হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, রামদা, লাঠিসোঁটা উঁচিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে এলাকা ত্যাগ করে। জনি হাসান লাবু সম্প্রতি মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। তার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চলে আসা চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানাতেই সমিতির সদস্যরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ইতোমধ্যে অন্তত অর্ধশত বিক্ষোভকারীর প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র হাতে মিছিলের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিংড়া উপজেলা সিএনজি-চালিত অটোরিকশা পরিবহণ মালিক সমিতির সদস্যদের উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন অটোরিকশা প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলছিলেন সংগঠনের সভাপতি সেলিম রেজা সেন্টু ও সাধারণ সম্পাদক রনজু আহমেদ। বৃহস্পতিবার সমিতির এই চাঁদাবাজির অবসান ঘটিয়ে সিএনজি প্রতি ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে দশ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে দেন সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস। সেইসঙ্গে সমিতিতে নতুন করে মো. বাপ্পীকে সহ-সভাপতি ও সিংড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি জনি হাসান লাবুকে যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় সিএনজি মালিক সমিতির কার্যালয়ে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকের সঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রনজু আহমেদের ভাতিজা রনি আহমেদের হট্টগোল বাধে। এক পর্যায়ে লাবুর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করে। সিএনজি সমিতির দায়িত্বে থাকা নেতারা আগে থেকেই শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশাচালক মুক্তার আলী, আনিছুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, এর আগে তাদেরকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সেই অর্থ দিয়ে বছরে একটা বনভোজন ছাড়া তাদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু এখন দশ টাকা হওয়ায় তারা সবাই খুশি।
মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করে জনি হাসান লাবু বলেন, সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম রেজা ও সেক্রেটারি রঞ্জু আহমেদ বছরের পর বছর সিংড়ার সিএনজি চালকদের চুষে খাচ্ছে। তারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে। প্রতিটি সিএনজি থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ টাকা চাঁদা আদায় করে। সিএনজি চালকরা ক্ষুব্ধ হয়ে এই মিছিলের আয়োজন করে। আমিও সেখানে ছিলাম।
মিছিলে সবার হাতে অস্ত্র থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সমর্থকরা মনে করেছিল আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। তাই তারা এগুলো নিয়ে এসেছিল।
অপরদিকে জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু আহমেদ বলেন, আমাদের সমিতি সরকার অনুমোদিত। এখানে এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন তারা (বিক্ষোভকারীরা) বিনা কারণে উসকানি দিচ্ছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে এসে অফিস ভাঙচুর করেছে। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তিনি বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আমাদের আÍীয়স্বজন অনেকেই স্বতন্ত্রের পক্ষে ভোট করেছে। সেই রাগে হামলাকারীরা এমন কর্মকাণ্ড করছে।
সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।