পবিত্র রমযান আসতে এখনো দেড় মাসের বেশি সময় বাকি আছে। কিন্তু ইফতার সামগ্রির দাম এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা ছোলাসহ ইফতার ও সেহরিতে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে এখন ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। অপর দিকে সবজি ও চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সবচেয়ে অস্থিতিশীল রমজানের অন্যতম পণ্য ছোলার বাজার। গতবছর প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও একই দাম দেখা গেছে। ওই ছোলা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। একইভাবে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে অ্যাংকর ডালের দামও বেড়েছে। এদিকে, বাজারে চালসহ সব ধরনের সবজি ও অন্যান্য বেশকিছু খাদ্যপণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের পরে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো সে দাম স্বাভাবিক হয়নি। কিছু দোকানে ২ থেকে ৩ টাকা কমতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ দোকানে বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। বাজারে পেঁপে, মুলা ছাড়া অন্যান্য সবজি ৮০ টাকার ওপরেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং আদা ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ এখনো বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা বেশি।
বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি। এছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
অপরদিকে কিছুদিন দাম একটু কমলেও ফের বেড়েছে গরুর গোশতের দাম। বাজারে এখন গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরোনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাতে রমজানে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না। একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ভোক্তার পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়।
সূত্র জানায়, রমজানকে ঘিরে সরকারের একাধিক সংস্থা তিন মাস আগেই বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারা মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে।
সবজি বাজারেও অস্থিরতা চলছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মূলা, শালগম ও পেঁপে এই তিনটি সবজির দাম তুলনামূলক কম। এই তিনটি সবজির কেজি ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য সবজির দাম এখনো নাগালের বাইরে। বিভিন্ন সবজির দোকানে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। করলার কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে। ঝিঙে ও ধুন্দুলের দাম বেড়ে কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আলুর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে বেগুন। প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। লাউয়ের দামেও সেঞ্চুরি। বড় আকারের প্রতিটি লাউ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দরদাম করে নিলে কোথাও কোথাও হয়ত ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। মানভেদে টমেটোর কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ থেকে ৯০ টাকা। মানভেদে শিমের কেজি পড়ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। দরদাম করে কিনলে কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে। আর শিমের বিচি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণ সবজির সিজনে আলুর দাম ২০ টাকার মধ্যে থাকত। এবার আলুর দামও বেশি। অন্যান্য সবজির দাম কমছে না।
সবজির পাশাপাশি বাজারে মাছের দামও চড়া। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের চাষের রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং আকারভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কই ২০০ টাকা, শোল ৩০০ টাকা, শিং মাছ কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় কাতল ৬০০ টাকায় এবং রুই ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।