রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম এখন ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ডিমের দাম কমলেও এখনো তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম কমেছে।
কমেছে সবজি ও পেঁয়াজের দাম। চিনি, আটা-ময়দা ও ডালের দাম বাড়তি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিমের দাম বর্তমানে কমে যে পর্যায়ে এসেছে, এর চেয়ে কমে গেলে খামারিদের ক্ষতি হবে।
তাদেরও তো টিকে থাকতে হবে। আজ (গতকাল) পাইকারিতে ১০০ ডিম বিক্রি করা হয়েছে ৮৫০ টাকায়। যা গত দুই-তিন সপ্তাহ আগেও এক হাজার টাকার ওপরে ছিল।’
দাম কমার কারণ হিসেবে আমানত উল্লাহ বলেন, ‘প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে ডিমের দাম কমে আসে।
এই সময়ে শীতের সবজি বাজারে চলে আসায় কম দামে ক্রেতারা সবজি কিনতে পারে। এবারও তা-ই হয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন চার-সাড়ে চার কোটি ডিম উৎপাদন হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা মো. রাজীব মিয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিম এখন এই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরায় প্রতি ডজন ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
কেউ বেশি ডিম নিতে চাইলে ডজন ১১০ টাকাও রাখা হচ্ছে।’
কয়েকটি করপোরেট কম্পানি প্যাকেটজাত ডিমের দাম এখনো কমায়নি। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির গতকালের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে খুচরায় ডিমের দাম কমে এখন প্রতি হালি ৪০ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মহাখালী কাঁচাবাজারে চায়ের দোকানি মো. সিরাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাসায় নিয়মিত ডিম রান্না হয়। যখন ডিমের ডজন ১৫০ টাকা হয়েছিল, তখন ডিম বাদ দিয়েছিলাম। দাম কমে যাওয়ায় এখন আবার খাচ্ছি।’
গতকাল রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি, আটা-ময়দা ও ডাল। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, খোলা আটা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ময়দার দামও বেড়েছে। প্যাকেটজাত দুই কেজি ময়দা এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে চিকন মসুর ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে এবং মোটা মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আদা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। দেশি রসুন কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মুরগি ও মাংসের দাম কমেছে
মুরগির দাম কিছুটা কমে ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কমে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সবজির দাম কমতির দিকে
রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মুলা ও পেঁপে ৪০ টাকা ও নতুন আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এখনো টমেটোর দাম বাড়তি। পাকা টমেটো প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন সবজির প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ক্রেতার নাগালে।’
https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/11/24/1339184