সরকার আরেকটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার আয়োজনে মত্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা।
তারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। মোটকথা মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিলাম। ’৭০-এর নির্বাচনে জনগণের দেয়া ভোটের ফলাফল না মেনে নেয়ায় আমরা রক্তের বিনিময়ে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন করেছিলাম। আর স্বাধীন ভূখণ্ডে আওয়ামী লীগ আজ গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরেছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। স্বাধীনতা চেতনার প্রতি আওয়ামী লীগের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতো না।
বিরোধী নেতারা আরো বলেন, সরকার আরেকটি মেয়াদ শেষ করেছে। দেশে নির্বাচনী আমেজে ঈদ আনন্দ মনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের অনৈতিক সব সিদ্ধান্তে নির্বাচনী আনন্দের পরিবর্তে দেশের প্রায় ৩৭টি রাজনৈতিক দল ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলনে ব্যস্ত। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং লজ্জাজনক।
বিরোধী নেতারা আরো বলেন, সরকার দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাতে জনগণ তাদের ভোট দিবে না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত। তাই নিশ্চিত পরাজয় মেনে নিতে না পেরে তারা গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার আয়োজনে মত্ত ।
এ দিকে বিগত ২টি নির্বাচন নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতার সাথে সাথে তাদের দলের সুনাম ও অস্তিত্বের কথা মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল। যেহেতু পরপর দুটো নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে, সেহেতু তাদের ঐতিহ্য ও সম্মান রক্ষার জন্য হলেও বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় এনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা প্রয়োজন। সব বিরোধী দল নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা না হলে দেশে গণতন্ত্রের কবর রচনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
তারা আরো বলেন, সরকারের মাথায় রাখতে হবে বিরোধী যে ৩৭টি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছে তারা এ দেশের অংশ। তাদেরকে আপনি বাদ দিতে পারেন না। তারা এ দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। আপনি তাদেরকে অবজ্ঞা করার মানে হলো দেশের মানুষকে অবজ্ঞা করা।
তারা বলেন, দেশের জনগণ চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। যে নির্বাচনে তারা নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের মতামত প্রকাশের যে অধিকার তা প্রয়োগ করতে। পাশাপাশি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান চান তারা। তারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে দেশকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
বিশিষ্ট নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা ভালো অবস্থায় নেই। একটা নির্বাচন খেলা শুরু হয়েছে। এই খেলার রেজাল্ট সবার জানা। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটো ব্র্যান্ড আছে, একটিকে বাদ দিয়ে আপনি নির্বাচন করলে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। আমরা আবার ভোটের অধিকার হারাবো। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে যেমন-তেমন একটা নির্বাচন হলে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরো প্রকট হবে। এতে করে যেকোনো সময় একটি গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তখন আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, সরকার একটি একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই চেষ্টা সফল হলে আমাদের দেশ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। পাশাপাশি যে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে এতদিন গণতন্ত্রের ধারকবাহক দাবি করে আসছিল তারাও রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে সাবেক সেনাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ভোটের অধিকার ও মুক্ত গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ জনগণের সেই অধিকার নষ্ট করেছে। তারা স্বাধীনতা চেতনার কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে সেই চেতনার প্রতি তাদের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। যদি থাকত তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ভয় পেতো না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি যে ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে সেটি হলো প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের এমপি তালিকা ঘোষণার দিন। ওই দিন আরো একবার মানুষের ভোটের অধিকার হত্যার জন্য সরকার নাটক মঞ্চস্থ করবে। তবে এবার জনগণ তাদের সে নাটক আর মঞ্চস্থ হতে দেবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা জনগণের ভোট কেড়ে নেয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়, ধ্বংসের জন্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের জনগণ সরকারের ঘোষিত তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন না। গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার আয়োজনের দিন। প্রধানমন্ত্রী কাকে কোন আসনে এমপি করবেন সেটা ঘোষণার তারিখ হলো ৭ জানুয়ারি। তবে আগের বারের মতো সরকার এ রকম একটা পাতানো নির্বাচন করতে পারবে বলে আমি বিশ^াস করি না।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরপর দুটো প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকার নিজেদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আরেকটি পাতানো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার, তথা গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এ দেশের মানুষ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে।