অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নানাবিধ মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের বিরোধী দলীয় রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার রেওয়াজ বিশ^ময় স্বীকৃত রেওয়াজ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে সে আদর্শ অনুসৃত না হওয়ার অভিযোগ বেশ জোরালো ভিত্তি পেয়েছে। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে বলপ্রয়োগ এখন আমাদের দেশে রীতিমত ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার ও দলীয় সন্ত্রাসীদের কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা দেয়ার ঘটনায় পুরো জাতিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাগামহীন দ-াদেশ। যা আমাদের রাজনীতিকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকেই ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রাজপথের প্রধান বিরোধী বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলার রায়ে রীতিমতো সাজার জালে আটকা পড়ছেন। বাদ যায়নি দেশের তৃতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীও। দলটির শীর্ষনেতারা দীর্ঘমেয়াদে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পুলিশের ওপর হামলা, কর্তব্য কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাজা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন আদালত। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্মমহাসচিব একজন, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক চারজন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তিনজন, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং জেলা পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। আদালত সূত্রে জানা যায়, তিন মাসে ২৬ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৪১১ জনের সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলতি নবেম্বরেই পৃথক ২০ মামলায় সাজা হয়েছে ২৭৪ নেতাকর্মীর। মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার জন্য কখনো রাতেও চলে আদালতের কার্যক্রম। যা বিরোধীমহলকে মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে দিয়েছে।
বিরোধী দলীয় আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বিচারকাজ এত দ্রুত চলছে যে, নির্বাচনের আগে আরও অন্তত ৫০টি মামলার রায় হতে পারে। এসব মামলায় আসামীর তালিকায় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান থেকে কর্মী পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে আরও প্রায় ৫শ’ মামলা।
বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে একের পর এক সাজার ঘটনাকে সরকারের নয়া কৌশল হিসাবে বর্ণনা করছেন তত্ত্বাভিজ্ঞমহল। তারা মনে করছেন, মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাজাপ্রাপ্তরা যেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। এ সব রায়কে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা নতুন করে দুশ্চিন্তায়ও পড়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী কেউ কোনো মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের ‘দ-প্রাপ্ত’ হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ‘অযোগ্য’ হন। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা বলছেন, বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে এবং আন্দোলন দমনের কৌশল হিসাবে তড়িঘড়ি করে এ পন্থা নিয়েছে সরকার। তবে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বিরোধীদের এ অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে এসেছেন। তারা বলছেন, সাজা নিয়ে বিএনপি বা অপরাপর বিরোধী দল যেসব কথা বলছে, তা মনগড়া ও ভিত্তিহীন। স্বাভাবিক নিয়মেই মামলার বিচারকাজ চলছে, তাড়াহুড়া হচ্ছে না। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সরকার পক্ষের এমন বক্তব্যকে যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত মনে করছেন না।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব (৪ বছরের সাজা), ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান (৪ বছরের সাজা) যুগ্মমহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল (২ মামলায় সাড়ে ৩ বছর), তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল (২ মামলায় সাড়ে ৩ বছর), স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু (দেড় বছর), গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক বেলাল আহমেদ (৪ বছরের সাজা), সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম (৪ বছরের সাজা), নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম (আড়াই বছরের সাজা), হাবিবুর রশিদ (২ বছরের সাজা), আকরামুল হাসান (২ বছরের সাজা), যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব (২ মামলায় সাড়ে ৪ বছরের সাজা), যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (২ বছরের সাজা), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান (২ বছরের সাজা), যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান (৩ বছরের সাজা), সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার (একাধিক মামলায় সাজা), রংপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আনিসুর রহমান লাকু (১০ বছরের সাজা) ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন (১০ বছরের সাজা), রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদসহ যুবদল, ছাত্রদল এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
আইনবিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, ‘বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের একের পর এক সাজা দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো সরকার যেন নির্বিঘেœ তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারে। সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করে সরকার বিএনপির নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছে-মন্তব্য করছেন কারা। বিরোধী মহলে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার দমন-পীড়নের অংশ হিসাবে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজার ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে পাবলিক প্রসিকিউটররা বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে আদালত আসামীদের সাজা দিয়েছেন। রায় নিয়ে যদি তাদের কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে। কিন্তু তাদের দাবি সাধারণ মানুষের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীতে নাশকতার অভিযোগে পৃথক ৭ মামলায় সম্প্রতি ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৪০ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২৫ জনের দুই বছরের সাজার আদেশ দেন আদালত। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার মামলায় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনকে দেড় বছর করে সাজা দেন আদালত। ২০১৩ সালে রাজধানীর তেজগাঁও থানার নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ বিএনপির সাত কর্মীকে ২ বছর ৬ মাসের সাজা দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীকে সাড়ে ৩ বছরের সাজা দেন আদালত।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চকবাজার থানার একটি মামলায় বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মীকে ২ বছর ৩ মাসের সাজা দেন আদালত। এর আগের দিন রংপুরে জেলা বিএনপির সদস্য-সচিব আনিসুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা যুবদলের সহসভাপতি তারেক হাসান সোহাগ, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহির আলম নয়নকে দশ বছরের সাজা দেয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, তিন মাসে পৃথক ২৬ মামলায় বিএনপির ৪১১ নেতাকর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে। এ মামলাগুলো ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দায়ের করা হয়েছিল। ফলে বিষয়টি নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিক।
এদিকে নির্বাচনের আগে আরও অন্তত ৫০টি মামলায় রায় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসব মামলায় আসামীর তালিকায় বিএনপি মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫শ’ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে আরও প্রায় ৫০ মামলা রায়ের পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলায় এক হাজারেরও বেশি আসামী। এর কোনোটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। কোনোটি আত্মপক্ষ সমর্থন পর্যায়ে। এসব মামলার বিচার শুনানি শেষ হলেই রায়ের দিন পড়বে। জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যান্টনমেন্ট থানার নাশকতার এক মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের তারিখ রয়েছে ২২ নবেম্বর। আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হলেই রায়ের তারিখ পড়তে পারে।
এছাড়াও ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গাড়ি পোড়ানোর এক মামলার সাক্ষ্যও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় বিএনপির উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবও রয়েছেন। এ মামলায়ও রায় হয়ে যাবে শিগগিরই এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায় থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায়ের নেতাকর্মী রয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে চার বছর আগে মারা যাওয়া ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতাকে ২০ নবেম্বর দেড় বছরের সাজার আদেশ দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত। মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেয়ায় তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবীও।
সাজাপ্রাপ্ত মৃত বিএনপি নেতার নাম আবু তাহের দাইয়া। তিনি নিউমার্কেট থানার ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। চার বছর আগে নিউমার্কেট এলাকায় মাথা ঘুরে পড়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। সম্প্রতি ঢাকার সিএমএম আদালতের রায়ে তাকেও দ- দেয়া হয়। সাজার পাশাপাশি মৃত তাহেরকে সাত হাজার টাকা জরিমানার আদেশও দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, একজন মৃত ব্যক্তিকে আদালত কীভাবে সাজা দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা বলছেন, চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়া, ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলামকেও কারাদ- দেন আদালত। এ ধরনের রায় শুধু বিচারের নামে অবিচার বা প্রহসনই নয়, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও।
এদিকে মৃত ও গুম ব্যক্তিদের পাশাপাশি ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারিক ক্ষমতা থেকে অব্যাহতিসহ সব সাজার রায় বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি দাবি করেছে, আইনজীবী হিসাবে সাজা দেয়া প্রতিটি মামলা পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, সাজাপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও অজ্ঞাত কারণে তাদেরকে সাজা দেয়া হচ্ছে। যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মারাত্মক লঙ্ঘন।
তারা আরো অভিযোগ করছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে কোনো ফৌজদারি অপরাধ প্রমাণ করতে হয়। অধিকাংশ মামলায় সাক্ষী হিসাবে শুধু পুলিশ সদস্যকে হাজির করিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত বিচারিক স্তরগুলোও অনুসরণ করা হয়নি। ফলে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তড়িঘড়ি করে বিএনপি নেতাদের সাজা দেয়া হয়েছে।
আমাদের দেশ সাংবিধানিকভাবেই গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সংবিধানভাবেই বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও পরমত সহিষ্ণুতা। কিন্তু আমাদের দেশের নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রীতিমত কক্ষচ্যুতি ঘটেছে। তাই এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার পরিবর্তে বলপ্রয়োগের নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহার এবং অনাকাক্সিক্ষতভাবে দলীয় পেশি শক্তির প্রয়োগের অভিযোগ দিনের পর দিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এজন্য গণমানুষের শেষ ভরসাস্থল বিচার বিভাগকে কাজে লাগানোর অভিযোগও উঠেছে সম্প্রতি। যা দেশের রাজনীতির জন্য এক মহাবিপদ সঙ্কেত।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভিন্নমত এবং পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা না করে বলপ্রয়োগ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একই সাথে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নামে অনাকাক্সিক্ষতভাবে মামলা দিয়ে রাজনৈতিক ময়দানকে প্রতিপক্ষ মুক্ত করাও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনাকাক্সিক্ষত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।