জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, শাষকগোষ্ঠীর ক্ষমতা লিপ্সা, নেতিবাচক রাজনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি এবং অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দি পরেও স্বাধীনতার সূফল দেশের জনগণ ভোগ করতে পারেনি। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদেরকেই অনৈক্য ও বিভেদের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, জামায়াত নেতা ডা. ফকরুদ্দীন মানিক, হোসাইন আহমদ ও সাইয়্যেদ হাসান ঈমাম প্রমূখ।
ড. করিম বলেন, আমরা অনেক ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে মহান স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত দেশের জনগণ। সাম্য, মৈত্রী, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চেতনা। কিন্তু মহলবিশেষের নেতিবাচক ও অপরাজনীতির কারণেই তা বাধা গ্রস্থ হয়েছে। একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র পুনর্গঠনে প্রয়োজন ছিল বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী শাষক গোষ্ঠীর বিভাজনের রাজনীতির কারণেই তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ এখনো গোটা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। দেশের স্বার্থকে জালাঞ্জলি দিয়ে ভিন দেশের স্বার্থে বিভিন্ন চুক্তি করতে চলছে। যা দেশ ও স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। তিনি স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, অবাধ মতপ্রকাশের স্বধীনতা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলেও এ সরকার তা কেড়ে নিয়েছে। এমনকি সভা-সমাবেশ এর মত গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্বাধীন দেশের নাগরিকরা। ভিন্নমতকেও রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। মূলত সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে মহল বিশেষের অর্জন দাবি করে মুক্তিসংগ্রামী বীর জনতাকে অপমানিত করেছে। কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে এ ধরনের ইতিহাস বিকৃতি মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের আলোকে নতুন প্রজন্মকে দেশ ও জাত গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে একের পর এক বরেণ্য রাজনীতিক ও জাতীয় নেতাদের হত্যা করছে। ইতোমধ্যেই দেশপ্রেমিক শীর্ষ জাতীয় নেতাদেরকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে দেশকে মেধা ও নেতৃত্বহীনতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মূলত সরকার ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র ও ইসলামী মূল্যবোধকে ধবংস করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে। তাই এই ফ্যাসীবাদী সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যই হোক এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের মূলত অঙ্গীকার।
মহানগরী সেক্রেটারি বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, খুন, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে দেশ বিশ^ মানচিত্রে এক রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। দুঃশাসন, দলীয়করণ, বাকস্বাধীনতা হরণ গোটা দেশকেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচেছ। ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ ও ঈমান-আকিদার উপর চলছে সর্বগ্রাসী হামলা। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার নামে তরুণ প্রজন্মকে ধর্মবিমুখ করার ষড়যন্ত্র করা হচেছ। তিনি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ইসলাম গণতন্ত্র ও বাংলার জনগণের মুক্তির আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।