চলতি ২০২৩ সালে দুই লাখ ১৮ হাজার ৫০৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মোট ২৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। অর্থনৈতিক নানা সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মোট ১৪টি সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের চলতি বছরের একনেক বৈঠকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পগুলো অনুমোদনে অগ্রাধিকার পেয়েছে সেতু, সড়ক ও কালভার্ট।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ হিসেবে দেবে এক লাখ এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সরকার বিনিয়োগ করবে এক লাখ ১২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা দেবে পাঁচ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার জনগণের উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে।
এসব প্রকল্প ভোটের প্রকল্প নয়। এসব প্রকল্প নেওয়া মানে এমন নয় যে আজই এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, সরকার সব সময়ই কাজ করে জনগণের উন্নয়নের জন্য, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
একনেক সভার উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অনুমোদন দিয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকার প্রকল্প।
দেশে অবকাঠামোগত ও দক্ষতা উন্নয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার তিন কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে রাখা হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা।
একনেক সভাগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি প্রথম একনেক সভা হয়। এতে মোট ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ১১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন সাত হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মিরাখালী পর্যন্ত উড়াল সেতু নির্মাণ, দেশের ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন (জিওবি-এআইআইবি), ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।
২০ জুনের একনেক সভায় প্রকল্পের সংখ্যা ও ব্যয় বেড়ে যায়। অনুমোদিত হয় ১৬টি প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। বৈদেশিক অর্থায়ন ১১ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর পর সরকারের সর্বশেষ দুই প্রকল্পে বেশি প্রকল্প ও বেশি ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদিত হয়।
গত ৯ নভেম্বর সর্বশেষ একনেক সভায় ৪৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বৈদেশিক অর্থায়ন সাত হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন এক হাজার ৫৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
ভোটের আগে একসঙ্গে এত প্রকল্প অনুমোদনে তাড়াহুড়া রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে একনেক সভা-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনাসচিব সত্যজিত কর্মকার গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে তাড়াহুড়ার বিষয় নেই। দেশের জনগণের উন্নয়নে সরকার বরাবর এমন প্রকল্প পাস করে। তা ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে অনেক দিন একনেক সভা হয়নি। তাই জমে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অধিক প্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপনের প্রকল্পটি গত ২৯ আগস্ট পাস হয়েছে। এক হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্বাচনী এলাকাকেন্দ্রিক। এ ছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর একনেকে ৮২৭ কোটি টাকার চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন নামে আরো একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। এটিও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় (চাঁদপুর-৩)।
অর্থনৈতিক সংকটের সময় বেশি করে প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ার কোনো মানে হয় না। বরং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা দরকার।’
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/11/18/1337266