রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) অধীনে থাকা ২১৯টি খালের ৯৮টিতেই অবৈধ দখলদার রয়েছে। দখলদাররা খালের ১৭৬ কিলোিমটার এলাকাজুড়ে দখল করে আছেন। মিরপুরের খালে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার ও বাড্ডা খালের ২ দশমিক ৬৩ কিমি দখল হয়ে গিয়েছে। এভাবে প্রতিটি খালেই দখলের চিত্র আছে। ১৫টি জলাশয়ের অনেকাংশ ভরাট হয়ে গিয়েছে। মানিকদি ও পাগলা জলকেন্দ্রিক পার্কের যথাক্রমে ৯০ শতাংশ ও ২২ শতাংশ জায়গা বেদখলে। গতকাল শনিবার বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এ চিত্র উঠে আসে। যৌথভাবে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ রিদিমা কুদ্দুস ও রিফাহ্ মাশিয়াত জেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম যৌথভাবে ‘লার্ন গ্লোবালি অ্যাপ্লাই লোকালি’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা বারিধারার ৯৫ শতাংশ ভবনে সেপটিক ট্যাংক ও শোকওয়াল নেই। তারা বর্জ্যের সংযোগ ড্রেনে-লেকে দিয়ে রেখেছে। অথচ এসব ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মূল্য ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবে না। একবার কয়েকটি ভবনের পাইপলাইনে কলাগাছ ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু কতগুলোতে কলাগাছ ঢুকাবো। তাদের বর্জ্য নিয়ে একটি মেলা করা যায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহেরর খালসমূহ পুনরুদ্ধারে দুই সিটি করপোরেশনের সকল প্রকল্পই ইতিমধ্যে একনেকের সভায় অনুমোদন হয়েছে। এখন কারও তোয়াক্কা না করে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেই খালগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ভবন নির্মাণে স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করার জন্য শনিবার থেকে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। যিনি নকশা করবেন, তিনিই তদারকি করবেন। তিনিই অকুপেন্সি সনদ দেবেন। ব্যত্যয় থাকলে ওই ব্যক্তির নিবন্ধন বাতিল হবে। রাজউক সেটা মনিটরিং করবে।
বিআইপির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিআইপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান, উপদেষ্টা মোহাম্মদ শওকত আলী খান, ইউএন হ্যাবিটেট, বাংলাদেশের কারিগরি উপদেষ্টা প্রিয়াংকা কোচার, সাংবাদিক অমিতোষ পাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা বিষয়ে আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ আনিসুর রহমান।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ, যোগ্য ও শিক্ষিত লোকের ঘাটতি নেই। তারা জানেন ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে কী করতে হবে। নদী-খাল-জলাশয় রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে। যানজট নিরসনে কী করতে হবে। সব কিছু জানলেও এসব সমস্যার সমাধানে যেটা করণীয় সেটা বাস্তবায়ন করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।