বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হলেও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানের স্বপ্ন আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। তাই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, জামায়াত নেতা জিল্লুর রহমান, আতাউর রহমান সরকার এবং মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান খান, আব্দুল খালেক ও আব্দুল ওয়াহিদ প্রমূখ।
ড. রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও এ সরকারের আমলেই ধ্বংস করা হয়েছে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সরকার জনগণের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে এবং নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। মূলত সরকারের অপরাজনীতির কারণেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়নি। তাই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীর মানুষই এখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বললেও উন্নয়ন হয়েছে ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের। সারা দেশেই চলছে দখলবাজী ও লুটপাটের মহোৎসব। দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলো এখন অরক্ষিত। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা চুরি হওয়ার মতো গর্হিত ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সরকার এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং অপরাধীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূলের নির্মম ও নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে। দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় ইসলামিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগ আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে কথিত বিচারের নামে নেতৃবৃন্দকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে অপরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সকল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
ড. করিম আরো বলেন, সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই জঙ্গীবাদকে জিইয়ে রাখছে। আর জঙ্গীবাদী তৎপরতা নির্মূল করতে হলে জনগণের সরকারের কোন বিকল্প নেই। তাই তিনি মহান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।