মূলধন ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী। বছরের পর বছর এ ঘাটতি টানতে হচ্ছে ব্যাংক চারটির। আর এজন্য কখনো জনগণের বাজেট থেকে বরাদ্দ দিয়ে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে, কখনো বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিসহায়তা দিয়ে ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এর পরও মূলধন ঘাটতির আবর্ত থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে ন্যূনতম মূলধনও পূরণ করতে পারেনি আলোচ্য ব্যাংকগুলো। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে যে পরিমাণ মূলধন রাখার কথা ছিল তা থেকে ব্যাংক চারটির কম রয়েছে আট হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এমনি পরিস্থিতি ন্যূনতম মূলধন ঘাটতি সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা দেয়া হয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ থাকবে তার কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে, যাকে ব্যাংকিং ভাষায় ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের হার বা সিএআর বলে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কখনো এই হার মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। আগে বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ রেখে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির একটি অংশ পূরণ করা হতো। কিন্তু এখন আর বাজেট থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। আবার কখনো নীতিসহায়তা দিয়ে এ ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোকে যখন কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় তখন এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের জুন শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ছিল ৭৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এ থকে ১০ শতাংশ হিসেবে ব্যাংকটির ন্যূনতম মূলধন রাখার কথা ছিল সাত হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকটির সংরক্ষণ করেছে তিন হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। মূলধন সংরক্ষণের হার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৫.১২ শতাংশ। যেখানে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের কথা ছিল ১০ শতাংশ হারে। তেমনিভাবে জনতা ব্যাংকের ৮৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ হারে আট হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি সংরক্ষণ করেছে ছয় হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৭.৪৫ শতাংশ। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক জুন শেষে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। মূলধন ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ২৩০ কোটি টাকা। তবে মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে সোনালী ব্যাংকের অবস্থান ভালো। ব্যাংকটির জুন শেষে মূলধন ঘাটতি রয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা এবং মূলধন সংরক্ষণের হার ৯.৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ব্যাংকগুলোর একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক চুক্তি) রয়েছে। বছরের শুরুতেই ব্যাংকগুলো কিভাবে খেলাপি ঋণ কমাবে, শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে কত অর্থ আদায় করা হবে, মূলধন ঘাটতি কিভাবে কমানো হবে তার আগাম লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দিয়ে থাকে। প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠক করে তাদের দেয়া লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। গতকাল জুনভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার পরিসংখ্যান নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দ্রু রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মূলধন ঘাটতি ন্যূনতম সীমায় উন্নীত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। একই সাথে খেলাপি ঋণ কমানো- বিশেষ করে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।