সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস এবং পুরো দেশই বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে; তাই দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ব্যর্থ ও জুলুমবাজদের পতন ঘটিয়ে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় করা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদশে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত চলমান আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসার সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় এবং ক্বারী লোকমান হোসেন কালামে হাকীম থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে চলমান অবরোধে নিহতদের রূহের মাগফিরাত, আহত এবং গ্রেফতারকৃতদের কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করা হয়।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশ সাংবিধানিকভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু দেশে নির্বিঘেœ ইসলামী মূল্যবোধ চর্চা করা যায় না। সর্বোপরি বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু দেশের কোন নাগরিকের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের কোন ক্ষেত্রে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বরং সরকার সবকিছুইকেই দলীয়করণ করে ফেলেছে। ডিসি, এসপি ও ওসি সহ প্রজতন্ত্রের কর্মচারিরা নৌকার পক্ষ ভোট প্রার্থনা করছেন। বিচারব্যবস্থাকেও পরিকল্পিতভাবে কলুষিত করা হয়েছে। কোন কোন বিচারক নিজেকে শপথের রাজনীতিক হিসাবে দাবি করছেন। এদের মাধ্যমে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিতষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তারা চলমান গণআন্দোলনেও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী জালিমরা সবসময় পরাজিত হয়; বিজয়ী হোন মজলুমরা। তাই আমরা চলমান আন্দোলনকে বিজয়ী না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকবো। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা কবরো-ইনশাআল্লাহ। তিনি গণদাবী আদায়ের লক্ষ্যে সকলকে রাজপথে ইস্পাত কঠিক ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকারের আমাদের শীর্ষনেতাদের জুডিশিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে গোটা দেশকেই বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। তারা ফরমায়েসী বাদী ও দলীয় প্রসিকিউশনের মাধ্যমে বিচারের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে দেশ ও জাতিত্বে কলঙ্কিত করেছে। স্বাক্ষীদেরও চুরি করা হয়েছে। মূলত, আওয়ামী লীগের ইতিহাস চুরির ইতিহাস। তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা দেশকে চোরের খুনী বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কম্বল চুরির ক্ষেত্রেও তারা বিশ^ রেকর্ড করেছিল। তাই এই আত্মস্বীকৃত চোরদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে দলমত নির্বিশেষে রাজপথে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় জাতি ঘাড় থেকে ফ্যাসীবাদী অপশক্তিকে নামানো যাবে না।
ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন, দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার রাসূল (সা.)কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তাকে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাঁর দাঁতকেও শহীদ করতে হয়েছে। শিয়াবে আবি তালিবে তাকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাই এই জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায়ে সকলকে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান।
ড. রেজাউল করিম বলেন, সরকারের জুলুম-নির্যতন যত বাড়ছে রাজপথ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গত কয়েক দিনের আন্দোলনে আমাদের নেতাকর্মীরা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে সরকারের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার জনতার ওপর পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে কমপক্ষে ১১ জনকে শহীদ করেছে। রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুুবুর রহমান, রাজশাহীতে ডা. কাজেম আলী, ডা.এরশাদুল আলীকে শহীদ করা হয়েছে। তাই চলমান আন্দোলনকে বিজয়ী করেই সকল হত্যার বদলা নেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার ও দলীয় সন্ত্রাসী মাঠে জনতার আন্দোলনকে নসাৎ করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু বীর জনতা সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করেই রাজপথে চলমান অবরোধ কর্মসূচিগুলোতে সর্বাত্মকভাবে সফল করেছে। এ থেকে আমাদের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই বরং জীবনবাজী রেখে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।