দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্য দেশের চেয়ে এই রোগে আক্রান্ত রোগী তিন গুণ বেশি। এতে পঙ্গু হয়ে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছে। দরিদ্রদেরকে বেছে নিতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। নানারকম পারিপাশির্^ক পরিস্থিতির চাপ সামলাতে না পেরে অনেকেই এর শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াকে বয়স্কদের রোগ বলা হলেও এখন আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন কম বয়সীরাও। মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতার এই রোগকে সাধারণত বয়স্কদের রোগই বলা হয়। তবে তরুণদের মধ্যে এই রোগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এখন। এজন্য অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকেই দায়ী করেন চিকিৎসকেরা। তবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণসহ জীবন আচরণে পরিবর্তন আনলে ঝুঁকি ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। এসময় দেশে ১১ শতাংশের বেশি মানুষ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছে। আক্রান্তদের ৪০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটান ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি। ২০২১ সালেও বাংলাদেশে প্রতি ছয়জনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিল, বর্তমানে এটি বেড়ে হয়েছে প্রতি চারজনে একজন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন, যা আগের বছর ২০১৯ সালে ছিল ৪৫ হাজার ৫০২ জন। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের রোগীর স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এই আক্রান্তের হার তিনগুণ বেশি বলে তথ্যে জানা যায়। বাংলাদেশে স্ট্রোকের প্রকোপ শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি।
মানসিক চাপও বাড়ছে: এতোদিন ধারণা ছিল স্ট্রোক শুধু বয়স্ক লোকদেরই হয়। তবে সেই ধারণা এখন পরিবর্তন হয়েছে। করোনার মধ্যে তরুণদের স্ট্রোকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেড়েছে। শুধু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে এই রোগ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন না। নানা রকম পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষা ও আর্থিক জটিলতার মধ্যে পড়ে প্রবল চাপ নিতে না পেরেও অনেকে স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়। এদেরকে হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ বা অন্যের সাহায্যে চলাফেরার অভ্যাস গড়ে তুলতে হচ্ছে।
ভিক্ষার ঝুলি হাতে : স্ট্রোকে আক্রান্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি অথবা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে অনেকেই। যাদের কিছুটা আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা চিকিৎসা ও থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও সামলে নিতে পারছেন। কিন্তু দরিদ্র-হতদরিদ্র ব্যক্তিরা কর্মহীন হয়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরে-গ্রামে এখন এরকম ভিক্ষুক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই লজ্জার মাথা খেয়ে ‘ভদ্র ভিক্ষুক’ হিসেবে অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। এধরনের ভিক্ষুক নিয়ে এখনো কোনো জরিপ হতে দেখা যায়নি এবং এদেরকে পুনর্বাসনেরও কোনো কার্যক্রম গ্রহণের কথা জানা যায়নি।