বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতার পথ অবলম্বন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আটটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। গত সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বাংলাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন ও বিক্ষোভে সহিংসতা এবং গ্রেফতার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে সই করা সংগঠনগুলো হলো- অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিকটিমস, ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রেডরেস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।
বিবৃতিটি রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় স্বাধীন প্রশাসনের অধীন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশ ঘিরে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে তাদের বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
গণমাধ্যমের রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ইঙ্গিত করে, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের দিন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিল। কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছিলেন (একজন পুলিশ সদস্য, একজন বিএনপি কর্মী ও একজন সাংবাদিক)। ৩১ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১১ জন নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক। যদিও বিক্ষোভকারীদের দিক থেকেও সহিংস প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া গেছে কিন্তু এসব সহিংসতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভিন্নমত দমন করতে নেয়া চরম পদক্ষেপের একটি উদাহরণ। বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভ চলাকালীন প্রাণহানি এবং সহিংসতা নিয়ে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিক্ষোভ শেষে বিএনপির নেতাদের বাসায় যায় পুলিশ। তারা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া বিএনপির পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থককে নির্বিচারে গ্রেফতারের খবর অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এই পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিক অভিব্যক্তির প্রকাশকে মারাত্মকভাবে দমন করে; আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করে।
বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে, আটক ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি। নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হাতে নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ গত কয়েক সপ্তাহে বহুগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভিন্নমত দমন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শাস্তি দিতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্র সহ ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করেছে। এটি গণতন্ত্রের নীতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারকে আরও ক্ষুণ্ন করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর এই তীব্র দমন-পীড়ন অগ্রহণযোগ্য এবং এ কারণে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং মৌলিক স্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে অন্তত দুই শ্রমিক নেতা প্রাণ হারিয়েছেন এবং বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার বন্ধ করতে এবং মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাকে সম্মান ও সুরক্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে নিজেদের অঙ্গীকার বজায় রাখা এবং বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে (ইউপিআর) এই উদ্বেগগুলি উত্থাপন করতে হবে। আগামী ১৩ নভেম্বর এটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা, দমন-পীড়ন এবং হুমকির চলমান চক্রের অবসানের পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারীভাবে গ্রেপ্তার হওয়া সকলের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি।