বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক হারুন অর রশীদ খান বলেছেন, ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোতে শ্রমিক সমাজ তাদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের পরও শ্রমিকরা এখনও তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মূলত ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক শ্রমনীতি না থাকায় শ্রমিক সমাজ আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। তাই শ্রমিকদের নায্য অধিকার রক্ষায় দেশে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডরেশন ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে এক মিছিল পূর্ব শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরীর সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা মো. আতিকুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, এইচ এম আতিকুর রহমান, আব্দুল্লাহ বাসির, আবুল কাসেম, খন্দকার শফিক ও হাবিবুর রহমান প্রমূখ। সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথির নেতৃত্বে শ্রমিকদের নিয়ে মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে শেষ হয়।
অধ্যাপক হারুন বলেন, শিকাগো ট্রাজিডির দু’শতাব্দীরও অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও শ্রমিকরা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। মূলত ইসলামী শ্রমনীতির অভাবেই শ্রমিক সমাজ আজও অধিকার বঞ্চিত। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলামী শ্রমিনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল শ্রেণির শ্রমিককে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশেনের ছাড়াতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি শ্রমিক অঙ্গনে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক, উৎপাদন ও জাতীয় উন্নয়নে ট্রেড ইউনিয়ন সমূহকে অবদান রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের ব্যর্থতায় মেহনতি শ্রমিক সমাজ ইসলামী শ্রমনীতির নতুন ধারায় ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মূলত এ পথই ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। মূলত সমাজের সকল কেত্রেই ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল সকল শ্রেণির মানুষের অধিকার নিশ্চিত ও সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তাই শ্রমিক সমাজের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজের সকল স্তরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। তিনি সেই স্বপ্নের সমাজ বিনির্মাণে সকলকে নিরলস প্রয়াস চালানোর আহবান জানান।
সমাবেশে তিনি দাবি জানান, ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে, শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় শ্রমিকদের অংশ প্রদান করতে হবে, সকল বন্ধ মিল কারখানা চালু করতে হবে, শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে, ন্যুনতম জাতীয় মজুরী কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নুন্যতম মজরী ১৬ হাজার টাকা চালু করতে হবে, শ্রমিকদের ন্যায়বিচার তরান্বিত করার স্বার্থে শ্রমিকঘন এলাকায় শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কল কারখানায় ঝুঁকিমমুক্ত কর্ম পরিবেশ তৈরীর পাশাপাশি আহত ও নিহত শ্রমিকদে উপযুক্ত ক্ষতিপুরন নিশ্চিত করতে হবে, শ্রমিকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, নারী-পূরুষের বেতন-ভাতার সমতা বিধান করতে হবে, কলকারখানায় শ্রম আইন অনুযায়ি মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা প্রদানসহ নারী শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য শিশু যত্মাগার স্থাপন করতে হবে, শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর পুর্ন বাস্তবায়ন করে সকল পেশায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।