পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে তাকওয়াভিত্তিক ন্যায়- ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে এক শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরী আমীর বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মহান বারতা নিয়ে বছর ঘুরে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। পবিত্র কালামে হাকীমে ঘোষিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের ওপর সিয়াম পালনকে অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অত্যাবশ্যকীয় ছিল; যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার’। হাদিস শরীফে এ মাসের প্রথম দশকে রহমত,দ্বিতীয় দশকে মাগফিরাত ও শেষ দশককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির ঘোষণা দেয়াহয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে,‘ যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমজান মাসে সিয়াম পালন করেন আল্লাহ তার পূর্বের সকল গোনাহ মার্জনা করে দেন এবং যে ব্যক্তিরমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে কিয়াম পালন করেন আল্লাহ তার সব গোনাহ মাফ করে দেন’। এ মাসের মর্যাদা বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি ধবংস হোক যে জীবনে রমজান মাস পেল অথচ গোনাহ মাফ করাতে পারলো না’। এই মহিমান্বিত ও মোবারক মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়। এই মাসেই ‘লাইলাতুল ক্বদর’ নামক এক মহিমান্বিত রজনী রয়েছে। কালামে পাকে সে রাতকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমাদেরকে একনিষ্ঠভাবে সিয়াম, কিয়াম পালন এবং মাহে রমজানের মর্যাদা রক্ষা করে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমজান আত্মসংযম, প্রশিক্ষণ, তাকওয়া অর্জন ও আত্মগঠনরে মাস। হাদিসে রাসুল (সা.) এ সিয়ামকে মু’মিনের জন্য ঢাল হিসেবে উল্লেখ কর হয়েছে। হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে, ‘ আল্লাহ বলেন সিয়াম আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব’। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ সায়েমদের জন্য সুসংবাদ দু’টি। একটি হলো ইফতারের সময় আর অপরটি হলো আল্লাহর সান্নিধ্যের
সময়’। মূলত তাকওয়া, তাজকিয়া ও আত্মগঠনের মাধ্যমে শোষণ ও বঞ্চণামুক্ত ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় হচ্ছে সিয়াসের প্রকৃত শিক্ষা। এই মহিমান্বিত মাসেই ইসলামের মর্যাদা রক্ষার প্রথম যুদ্ধ ‘বদর যুদ্ধ’ সহ ইসলামের ইতিহসের বড় বড় ঘটনাগুলো সংঘঠিত হয়েছিল। এ মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজের এবং একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০ টি ফরজের সমতুল্য। তাই এই মহিমান্বিত মাসের গুরুত্ব কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে তাকওয়া ও আল্লাহর
সন্তষ্টি অর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলনে, মূলত সিয়ামের শিক্ষা ও মর্যাদা সম্পর্কে গণসচেতনা সৃষ্টির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সরকার জনগণের আধ্যাত্মিক ও জাগতিক কল্যাণে কাজ না করে নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পবিত্র মাহে রজমানের প্রাক্কালে জেরুজালেমে দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অর্ধশতাধিক মুসলিম শহীদ করার পরও সরকার বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিরব। পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য কমানো হলেও আমাদের দেশের সরকারের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতার কারণেই প্রতিবছরই মূল্যষ্ফীর্তির ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয় সরকারের অপশাসন-দুঃশাসনের কারণেই দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ধর্ষণ, অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যা এখন নিত্য-নৈমিক্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণেই এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস অত্যাসন্ন হলেও নগ্নতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অবৈধ প্রদর্শনী ও দিনের বেলা হোটেল রেস্তোরা বন্ধ রাখতে সরকারকে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। মূলত দেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকায় এসব সমস্যার কোন যৌক্তিক সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অপশাসন-দুঃশাসন, জুলুম-নর্যিাতন, ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মাহে রমজানের শিক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সরকারের প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান ও রমজান উপলক্ষ্যে ন গরবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানান।