৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১১:২৪
এবার ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যু হলো। মশা যেমন অপ্রতিহত তেমনি ডেঙ্গুজ্বরও অজেয় হয়ে উঠেছে। কিছুতেই ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই দেশে ৮ থেকে ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে।
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। এখানে যেমন ডেঙ্গুর রোগী বেশি, তেমনি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে মৃত্যুও বেশি। গতকাল সারা দেশে ডেঙ্গুতে যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ১৭ জনই ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে গত ১৯ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্য থেকে। চলতি বছর গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্য থেকে মোট মৃত্যু হয়েছে ৬১৮ জন। অর্থাৎ দেশে প্রতিদিন গড়ে দুইজনের বেশি মারা গেল, অন্য দিকে আগস্টে গড়ে মারা গেছে ১১ জনের কিছুটা বেশি (১১.০৩ জন)। গত জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন মারা গেছে ৬ জনের বেশি (৬.৫৮ জন)। সেপ্টেম্বরের গত দুই দিনে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৮৮৬ জন এবং এই দুই দিনে মারা গেছে ২৫ জন।
দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০২২ সালে ২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এ ছাড়া কোভিড সংক্রমণের বছর ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন।
এ দিকে ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবহৃত ডিএনএস স্যালাইনের ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। ফার্মেসিগুলোতে ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে ঘাটতি না থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল স্যালাইন পায় না। রোগীদের ওপরেই ছেড়ে দেয়া হয় ডিএনএস স্যালাইন সংগ্রহের দায়িত্ব। ডিএনএস স্যালাইন রোগীদের দেহে গ্লুকোজের ভারসাম্য নিয়ে আসে। ফলে ডেঙ্গু রোগীরা দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরসহ সারা দেশেই মশক নিধনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হোক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তাতে ডেঙ্গু চলতি মাসেও তেমন কমবে না। যদি কমে তবে প্রাকৃতিক কারণে কমতে পারে। দুই সিটি করপোরেশনের লোক দেখানো মশক নিধনে এডিস মশা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা কিছুতেই সম্ভব হবে না। কারণ মশক নিধনে এই দুই সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এ মোজাহেরুল হক বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়বে তা গত মার্চ মাস থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর বলে আসছে। গত মে মাসে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর আবারো জানিয়েছে, জুন মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরো বাড়বে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো কিছু করেনি। গতানুগতিক মশক নিধনে মিডিয়া কাভারেজ নিয়েছে তারা। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ঢাকার কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করে স্থানীয় সমাজসেবা সংগঠনগুলোকে কাজে লাগিয়ে সিটি করপোরেশন মশক নিধন কার্যক্রমে নামলে পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যাবে। কারণ স্থানীয় লোকজন জানে কোথায় কোথায় মশার বংশ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তারা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করলে মশা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, প্রকৃতপক্ষে ঢাকায় মশা নিধনে বা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছি না। যা দেখা যায়, সেগুলো লোক দেখানো। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পানি জমে থাকে এমন প্রতিটি স্থান প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে হবে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত। ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীনও বলেছেন, ঢাকার জনগণকে মশা নিধনে সম্পৃক্ত করতে না পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম কমিটি করে দিতে হবে এবং এলাকার যুবক সম্প্রদায়কে এই কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। অন্য দিকে ঢাকার অস্বচ্ছল এলাকায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে যেন সবাইকে মশারির ভেতরে ঘুমানো নিশ্চিত করা যায়। সবাইকে মশারির ভেতর ঘুমানো নিশ্চিত করতে পারলে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে যাবে। উল্লেখ্য, অস্বচ্ছল পরিবারের অনেকেই রাতে মশারি ছাড়াই ঘুমিয়ে থাকেন।