বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, আজকের শিশু-কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই ছাত্রশিবির সন্ত্রাস ও পেশিশক্তি নির্ভর চলমান সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে মেধা, জ্ঞান ও নৈতিকতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মিশন নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক শান্তির সমাজ বিনির্মাণে দেশে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ নিশ্চিত, মেধা ও মননের বিকাশের মাধ্যমে যোগ্য নাগিরক তৈরির কোন বিকল্প নেই। ইসলামী ছাত্রশিবির সেই মহতি উদ্যোগকে সামনে রেখেই প্রতি বছরই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্বর্ধিত করে। তিনি এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং নিজেদেরকে যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তুলে আগামী দিনের দেশ ও জাতির নেতৃত্ব গ্রহণে প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।
তিনি, আজ লক্ষ্মীপুরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির লক্ষ্মীপুর শহর শাখা আয়োজিত এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শহর সেক্রেটারি মুহা. আবু জাফরে সভাপতিত্বে ও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক রবিউল ইসলাম ফরহাদের পারিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক শহর সভাপতি মু. ফয়েজ আহমদ। উপস্থিত এইচআরডি সম্পাদক আব্দুল বাতেন, প্রকাশনা সম্পাদক আসিফ হোসেন সহ শাখা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ড. এম আর করিম বলেন, আমাদের দেশে মেধা নয় বরং সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বেরই অভাবটা বেশ প্রকট। যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা যে সকলেই মেধাহীন এমন দাবি করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, নৈতিকতা ও মূল্যবোধহীন নেতৃত্বের সরব উপস্থিতির কারণেই দেশ আজ দূর্নীতি, অনিয়ম ও অপশাসনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নির্বাসিত হয়েছে গণতন্ত্র আর ভূলুন্ঠিত হয়েছে মানবাবিকার। সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমী নেতৃত্বের অভাবেই অনেক ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল থেকে আমরা অনেকটাই বঞ্চিত। মূলত শুধু মেধা ও যোগত্যা নয় বরং তার সাথে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, গণমানুষের প্রতি কর্তব্য ও দেশাত্ববোধের সুসমন্নয়ের মাধ্যমেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন শান্তির সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। তাই এইসব গুণে গুণান্বিত নাগরিক তৈরি করতে হলে ওহী লব্ধ জ্ঞান ও মুহাম্মাদ (সা.) আদর্শ নেতা হিসেবে গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ছাত্রশিবিরের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করার জন্য আধিপত্যবাদী শক্তির সহযোগিতায় একটি চিহ্নিত মহল নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ইসলামী মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই কয়েকজন জাতীয় নেতাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করে নন্দিত দেশ ও জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে নির্বিঘ্ন করতেই জনগণের ওপর হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের পথ বেছে নিয়েছে। কথিত মাদববিরোধী অভিযানের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানুষ হত্যার উম্মুক্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সরকার মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বললেও সরকারি দলের মাদক সম্রাটদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যা কথিত মাদক বিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তিনি আরও বলেন, মাদক, ধুমপান সহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যার কারণে যুবসমাজ আজ চরমভাবে অবক্ষয়ের শিকার। এই অবক্ষয়ের হাত থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য দেশের একমাত্র জননন্দিত ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসাবশত আদর্শবাদী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। পক্ষান্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের পরিবর্তে সরকার দুষ্টপক্ষকেই সহায়তা করা করছে। এমনকি যারা সন্ত্রাসী, ছাত্র-শিক্ষক লাঞ্চনাকারী মাদক এবং সন্ত্রাস বিস্তৃতি ঘটানোর সাথে জড়িত সেই ছাত্রলীগকে সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। মূলত সরকার জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে চায়। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র কখনও সফলে হবে না বরং তা একদিন তাদের জন্যই বুমেরাং হবে-ইনশা আল্লাহ। তিনি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ছাত্রশিবিরের যে ঐতিহাসিক প্রয়াস চালাচ্ছে সে মহতি কাজকে এগিয়ে নিতে সকলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।