২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৭:৪২
ডেঙ্গু গ্রীষ্মকালীন ভাইরাসজনিত রোগ হলেও আমাদের দেশে এর ব্যাপ্তিটা এবার বেশ বেশি। চলতি বছরে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে দীর্ঘ মেয়াদে। আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। এই রোগের এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় বিকল্প পদ্ধতিতে। তাই চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। সর্বোপরি একশ্রেণির চিকিৎসক, বেসরকারি হাসপাতাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিলোভের কারণে চিকিৎসা ব্যয় একেবারে আকাশ ছুঁয়েছে। যা ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ চলছে সমানতালে। পরিস্থিতির অবনতি হতে হতে একেবারে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেশে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গু জ¦রের মৌসুম হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি এখন রীতিমত উদ্বেগের। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণায় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় বরং যা করা হচ্ছে তা একেবারেই নামকাওয়াস্তে।
মূলত, এবারের ডেঙ্গু সংক্রমণ গতানুগতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এবারে ডেঙ্গুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড থাকলেও সে রেকর্ড ভেঙেছে চলতি বছরের ৭ মাসেই। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ‘হেলথ ইমারজেন্সি বা জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণার দাবিও উঠেছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর এটিই আমাদের জন্য রীতিমত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এমন অস্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)। ১১ আগস্ট প্রকাশিত সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক বিস্তারের সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে দেশটিতে ডেঙ্গু আক্রমণ, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ও মৃত্যুহার গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ২১ জুলাই প্রকাশিত সংস্থার গ্রীষ্মম-লীয় রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. রমন ভেলাউধনের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার পৃথিবী জুড়েই বাড়ছে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক হতে পারে। রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। আর বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ। তাই এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা থাকলেও তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৮২ হাজার ৫০৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৮৭ জনের। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে যত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা মৃত্যুর শিকার হচ্ছে তার প্রকৃত চিত্র এই পরিসংখ্যানে আসেনি। কারণ, অনেকেই যেমন ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের তথ্য এখানে যুক্ত হচ্ছে না। আবার দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য এখানে নিয়মিত আসছে না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ডেঙ্গুরোগীদের তথ্য আসে না স্বাস্থ্য বিভাগে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থাও বলছে, রোগীর যে সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, তা মোট সংক্রমণের একটি অংশ মাত্র। কারণ অনেকের মধ্যেই উপসর্গ সেভাবে স্পষ্ট হয় না। অনেকেই পরীক্ষার বাইরে থেকে যান। এ রোগে মৃত্যুর হার ১ শতাংশেরও কম বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধনে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে একই কথা। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের সহায়ক এ সংস্থার প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির জন্য মশার বংশবিস্তারে বাংলাদেশের অনুকূল পরিবেশকে দায়ী করেছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডাব্লিউএইচও বলেছে, মশার বিস্তার কমাতে যেন পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ একেবারেই দায়সারা গোছের। সিটি কর্পোরেশনগুলোও মশক নিধনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলোতে ছেটানো হচ্ছে না প্রয়োজনীয় কীট-পতঙ্গনাশক। নগরীতে মাঝে মাঝে ফগারের শব্দ শোনা গেলেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও কীটনাশকের মানহীনতার কারণে এতে কোন ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশন এখন মশক প্রজননের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এদিকে দেশে দীর্ঘ পরিসরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি চলমান ও ভয়াবহ অবনতির প্রেক্ষাপটে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা। কারণ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য সরকারি পদক্ষেপ মোটেই সন্তোষজনক ও পর্যাপ্ত নয়। আর এতে সরকারের কোন কার্যকর তদারকিও নেই। তাই একশ্রেণির চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো সে সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যা আক্রান্তদের সর্বস্বান্ত করছে।
বিশেষ করে সন্তানসম্ভবা মায়েদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ জটিলতা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, এসব নারীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চমূল্য ও ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। একই সাথে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ব্যাপক চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কোনভাবেই হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের স্থান সঙ্কুলান করা যাচ্ছে না। অপেক্ষাকৃত ভালো চিকিৎসার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে ঢাকায় রোগী প্রেরণের কারণে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ব্যাপক চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সুযোগকেই পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির সুযোগ সন্ধান।
মূলত, ডেঙ্গু রোগীর চাপে রাজধানীর অনেক সরকারি হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই। আবার বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। প্রতিদিন প্লাটিলেট পরীক্ষা, ডেঙ্গু শনাক্তের টেস্ট, সিভিসিসহ অন্যান্য পরীক্ষায় যাচ্ছে অনেক টাকা। অনেক ক্ষেত্রে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় সবার খরচ মেটাতে নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকার ৪শ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। রোগী প্রতি গড়ে সরকারি কোষাগার থেকে গিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা নেয়া মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী এক লাখ ১৬ হাজারের কিছু বেশি। বাকি ৩০ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী বেসরকারিতে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে ধরে নেয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতালে গড়ে একজন রোগী ১ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করছেন। সেই হিসাবে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই রোগীদের। সরকারি হাসপাতালে যেখানে নিজস্ব দাতার কাছ থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট নিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকার মতো, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় নেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন তদারকি নেই।
রাজধানীর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্রিটিক্যাল ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালেও ১ লাখ টাকার উপরে ব্যয় হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় আরও কয়েকগুণ বেশি। সুযোগ বুঝে বেড়েছে স্যালাইন, স্যালাইন দেয়ার অনুষঙ্গ ক্যানোলা ও মাইক্রোপ্রোসেসর এর দামও। রক্তের ব্যাগের দামও বেড়েছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো দু’ভাবে প্লাটিলেট বাণিজ্য করছে। প্রথমত, ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট লাগবে-এমন একটি ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে জন্মেছে। এই ধারণাকে পুঁজি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেসব রোগীর প্লাটিলেটের প্রয়োজন নেই, তাদেরও প্লাটিলেট দিচ্ছে। আবার প্লাটিলেট দিতে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ গুণ টাকা নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাটিলেট দু’ভাবে সংগ্রহ করা যায়। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ও র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় একজন দাতার শরীর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট নিতে একজন রোগীর ব্যয় হয় মাত্র ২ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ব্যবস্থাপনায় ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে। যা চিকিৎসা সেবার নামে রীতিমত স্বেচ্ছাচারিতা।
র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় চারজন দাতার রক্ত নিয়ে এক ব্যাগ প্লাটিলেট তৈরি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট পেতে শুধু স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে রক্তের ব্যাগ না থাকলে সেই দামটি ফি’র সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু বেসরকারিতে চার দাতার রক্ত পরিসঞ্চালনেই রোগীর ব্যয় হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় ডোনার স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি।
আর প্রতি ব্যাগ রক্ত থেকে প্লাটিলেট বের করতে দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চার ব্যাগ রক্ত থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট পেতে রোগীর ব্যয় হয় ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকা। আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসেবে আরও দিতে হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাজমার ক্ষেত্রেও একই ব্যয় হয়ে থাকে। তবে প্লাজমা খুব কমসংখ্যক রোগীর লাগে। যাদের প্লাজমা ক্ষরণ হয়, তাদের চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ও রক্তদানকে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সরকারি হাসপাতাল সূত্র বলছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় বাড়াতে প্রথম থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে অ্যালবুমিন প্রয়োগ করে। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। একটি অ্যালবুমিনের দাম ৭ হাজার ৬০০ টাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেসরকারিতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা এনএস-১ ও আইজিজি-আইজিএম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিবিসি পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেশি নেয় হাসপাতালগুলো। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর শরীরে স্যালাইন ঢোকানোর জন্য ক্যানোলা ব্যবহার করা হয়। ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় উৎপাদক ও সরবরাহকারীরা ক্যানোলার দাম বাড়িয়েছে। আগে ক্যানোলার যে সেটের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন সেটি ১৫০ টাকা। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে ক্যানোলা স্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ টেপ। আগে এর দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখন তা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা দিনে ৩ থেকে ৪ বারও করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আরও নানা ধরনের পরীক্ষা করতে হচ্ছে রোগীর। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা গেলেও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এতে ব্যয় বাড়ছে চিকিৎসার। এই ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। সেখানে শয্যা ভাড়া, চিকিৎসকের ভিজিট, ওষুধসহ নানা খরচে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। ডেঙ্গুর রোগীর পথ্যের দামও বেড়ে গেছে বলে রোগীর স্বজনরা জানান। তারা বলেন, ডাবের দাম এখন আকাশচুম্বী। একটি ডাব কিনতে ১শ’ টাকা লাগছে। এ ছাড়া পেঁপে, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সব জায়গায় দুর্নীতি। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে। সরকারি হাসপাতালেও স্যালাইন পাওয়া যায় না। সিট না পেয়ে ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। এ সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের পকেট কাটছে। মশাকে আগে প্রতিরোধ করলে তো রোগী হাসপাতালে আসবে না। তখন চিকিৎসা ব্যয়ও লাগবে না।
মূলত, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের আগাম পদক্ষেপ এবং সতর্কতার অভাবেই চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা। রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকার যে বরাদ্দ রেখেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির অতিলোভী চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলো। ফলে আক্রান্ত এবং তাদের স্বজনরা চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন।
তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ডেঙ্গুর বিস্তাররোধে সরকারকে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ধ্বংস করতে হবে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহিত মশার প্রজনন স্থানগুলো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। একই সাথে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপশি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। আর বেসরকারি খাতে চিকিৎসার জন্য খরচের সীমাও বেঁধে দেয়া জরুরি; যাতে ভুক্তভোগীরা সাশ্রয়ী মূল্যে সুচিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। অন্যথায় আগামী দিনে সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।