আল্লাহর ওপর একনিষ্ঠ ঈমান এবং জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সে পথে অবিচল ও আপোষহীন থাকার কারণেই কালজয়ী দাঈ ও বিশ^খ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শহীদ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল থানা পশ্চিম আয়োজিত শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রাহি.)-এর জীবন ও কর্ম বিষয়ক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও শিক্ষা বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত থানা আমীর শামশুল হুদার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আহসান উল্লাহর পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মুফতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও হাতিরঝিল অঞ্চল পরিচালক মো. হেমায়েত হোসাইন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার। আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের হাতিরঝিল থানা পশ্চিমের সভাপতি ফজলুর রহমান প্রমূখ।
ড. রেজাউল করিম বলেন, শহীদ আল্লামা দেওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, কালজয়ী দাঈ, লেখক, প্রশাসক সর্বোপরি জননন্দিত জনপ্রতিনিধি। তিনি দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাণী বিশে^র একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। শহীদ তার ক্ষুরধার ও সাবলীল তাফসিরের মাধ্যমে সকল তন্ত্রমন্ত্রের ওপর ওহীর শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরিণত হয়েছিলেন দলমত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের নয়নমণিতে। তার শাহাদাতে শোক প্রকাশ করার কারণেই শতশত ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কারই প্রমাণ করে শহীদ সাঈদী কত জনপ্রিয় ও দেশপ্রেমী জাতীয় নেতা ছিলেন। তিনি আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লামা সাঈদীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও হত্যার বদলা নেওয়া হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী কথিত বিচারের নামে অবিচার এবং জামায়াতের শীর্ষনেতারা বিচারিক হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন। বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারী পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় দিবালোকের মত প্রমাণ হয়েছে যে, আল্লামা সাঈদী সহ সকল শীর্ষনেতারাই ছিলেন দেশপ্রেমী। আল্লামা সাঈদীকে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি সকল অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। সময়মত সে রায় জাতির সামনে প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উম্মোচন করা হবে। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী এক সাঈদীকে হত্যা করে ইসলামের অগ্রযাত্রা কোন ভাবেই রোধ করা যাবে না বরং শহীদ সাঈদীর প্রতিফোটা রক্ত থেকে লক্ষ সাঈদীর জন্ম নিয়ে তার অসাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করেই ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।
প্রধান আলোচকের আলোচনায় ড. মুফতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার বলেন, মুমিনের প্রকৃত সাফল্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ। আল্লাহ এই মহাপুরুষ্কারের জন্য মুমিনদের সাথে একটি চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আর সে চুক্তির শর্তানুসারে আল্লাহ মুমিনদের গোনাহ মাফ ও জান্নাত দানের জন্য তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন। শর্তগুলো হলো-আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা এবং তার পথে জান ও মাল দিয়ে সর্বাত্মক সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া। এই তিনটি শর্ত পালিত হলেই আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফের প্রতিশ্রæতি ও নহর প্রবাহিত জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন। মূলত, এটিই হবে মুমিনদের সবচেয় বড় সফলতা। তাই আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্তাবলী পালন করেই আমাদেরকে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। তিনি আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ময়দানে সর্বশক্তি নিয়োগের আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে শামশুল হুদা বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় এক প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা। আল্লামা সাঈদী ছিলেন এ পথে আমাদের প্রেরণার উৎস। তিনি শহীদী তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান