মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা ও রাসূল (সা.) অনুসৃত নীতি অনুসরণ করে সকলকে আদর্শ পরিবার গঠনের মাধ্যমে দ্বীনের বিজয় তরান্বিত করার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মোঃ মা’ছুম।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত পারিবারিক দিসব উপলক্ষ্যে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসার সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় এবং বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ড. মাওলানা কামরুল ইসলাম শাহীনের দারসূল কুরআনের মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ড. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমুখ। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে মনোমুগ্ধকর ও হৃদয়গ্রাহী সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাইমুম শিল্পিগোষ্ঠীর শিল্পিরা।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। কালামে হাকীমে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষ ও জ¦ীন জাতিকে শুধুমাত্র তার আনুগত্য তথা ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। অন্য আয়াতে মানুষকে দুনিয়াতে খলিফা হিসাবে প্রেরণের কথা বলা হয়েছে। মূলত, আল্লাহ আমাদের মালিক ও শ্রষ্টা। আমরা তার আব্দ তথা দাস বা গোলাম। আল্লাহ তায়ালা আব্দ বা গোলামদেরকে খলিফার দায়িত্ব অর্পন করে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করেছেন। তাই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা মোতাবেক আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে পুরোপুরি দাখিল হয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি পরিবারকে ইসলামের দূর্গ হিসাবে গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ, ইনসাফপূর্ণ, বিজ্ঞানসম্মত ও নির্ভুল জীবন বিধান। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের যথাযথ ও পুরোপুরি মেনে চলা অত্যাবশ্যক। পারিবারিক বলয় থেকে শুরু করে সামাজিক জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-আচার, রাষ্ট্রাচারসহ সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধানের পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে। আর ইসলামকে যথাযথ করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র দরকার। কারণ, কোন অনৈসলামী সমাজে ইসলামের পুরোপুরি অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই দেশকে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি রাষ্ট্রীয় জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় ও অসত্যের রাজপথে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের ওপর নির্মম দলন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। সে ধারাবাহিকতায় বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ শীর্ষ জাতীয় নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব করে ফ্যাসীবাদী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির শেষ রক্ষা হবে না। তিনি নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত সহ শীর্ষনেতাদের মুক্তি দিয়ে সরকারকে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহবান জানান। অন্যথায় তাদেরকে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ইসলামে পারিবারিক বন্ধনকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মুসলিম পরিবারে শান্তি থাকল উম্মাহও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বস্তুত, সভ্যতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা দরকার। ইসলাম বিমুখ উত্তবিত্তের মানুষের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন ভঙ্গুর হওয়ায় সেসব পরিবারে কোন শান্তি নেই। তারা নির্বিঘেœ ঘুমাতেও পারেন না। মূলত, পারিবারিক বন্ধন দ্বীন বিজয়ের পূর্বশর্ত। তিনি দ্বীনের সফল বিজয়ের জন্য পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটই হচ্ছে পরিবার। পরিবারকে কেন্দ্র করেই সবকিছু আবর্তিত হয়। আর তা সমাজ পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারকে আদর্শ পরিবার হিসাবে গঠন করতে হবে। শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন ও শৃঙ্খলাই মানবজীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে গতিশীল ও শানিত করার জন্য সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।