আজ ৩০ আগস্ট ২০২৩, আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস।
২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গুম হয়ে যাওয়া সদস্যদের পরিবার ও বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এই দিনটিকে পালন করে আসছে।
২০০৮ সালে বর্তমান জুলুমবাজ আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে দখল করতে রাষ্ট্রীয় মদদে বিরোধীদল ও মতকে দমনের জন্য গুম-খুনের পথ বেছে নিয়েছিল।
এই কালো মিশনে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে মাঠের রাজনীতীতে সবচেয়ে সক্রিয় দল বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও দেশের প্রধানতম দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬২৩ জন ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গুম করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৮৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন বা পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৩৮৩ জনকে। বাকিদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন তথ্যই জানা যায়নি !!
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ জন নেতাকর্মীকে গুম করে আজও পর্যন্ত স্বীকার করেনি জুলুমবাজ এই সরকার।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট মধ্যরাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ,ভাষা সৈনিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপকার অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহীনির চৌকষ ও মেধাবী কর্মকর্তা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে ঢাকার বড় মগবাজারের নিজ বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যায়।
একইভাবে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য, শত প্রতিষ্ঠানের সফল বাস্তবায়ক, শহীদ মীর কাসেম আলীর পুত্র, তারই মামলার পধান কৌসুলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানকে রাজধানীর সেনা অধ্যুষিত মিরপুর ডিওএইচএস এর বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় তুলে নিয়ে যায়।কিন্তু আজ ০৭ বছরেও তাদের গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি কোন বাহিনী অথচ গুম থেকে ফেরত একাধিক ব্যক্তি মিডিয়াতে টর্চার সেলে তাদের অবস্থানের বিষয়ে জানিয়েছিল।
গুমের এই অমানবিক কার্যক্রম থেকে বাদ যায়নি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও সুশৃংখল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও
২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী বাসে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্য রাতে গাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এন্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রশিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাসকে আশুলিয়ার নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে গ্রেফতার করে। কিন্তু আজ ১৩ বছরেও তাদের গ্রেফতারের স্বীকার করেনি গুমকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে সাদাপোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্যামলী রিং রোডের বাসা থেকে আদাবর থানার সভাপতি হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
আশ্চর্যজনক ভাবে সত্য হলেও উপরোক্ত প্রত্যেকটি ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এমনকি পরিবার ও স্বজনদের পক্ষ কোন জিডি পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
এভাবেই একের পর এক গুম খুনের কারণে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বারবার উদ্বেগ প্রকাশ এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করলেও এই সরকার তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাতই করেনি,বরং এই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন- গুম হাওয়া ব্যক্তিরা নাকি ঋণের দায় থেকে বাঁচতে একা একাই গা ঢাকা দিয়েছেন বা উধাও হয়েছেন। যা গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেকটি পরিবার ও স্বজনদের নীরব কান্না শোনার যেন কেউ নেই। রাষ্ট্র, সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কারো কর্ণ কুহরে যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করেনা। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা জানতেও পারছেনা তারা কি জীবিত নাকি মৃত?
পিতার অপেক্ষায় তার সন্তান, স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, সন্তানের অপেক্ষায় মা-বাবা। এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। বুক ভরা বেদনা নিয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা।এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কবে???