বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ইসলাম ও কুফরের ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই ইসলাম জাজিরাতুল আরবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তিনি মুসলিম উম্মাহর স্বকীয়তা রক্ষা ও মুসলমানদের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ঐতিহাসিক বদর দিসব উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৭ই রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ মোতাবেক দ্বিতীয় হিজরীর এই দিনে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবি (রা.)কে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সা.) বদর উপত্যকায় কোরাইশ বাহিনীর সঙ্গে এক সর্বাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ইতিহাসে এ যুদ্ধকে বদর যুদ্ধ বলে অবহিত করা হয়। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.)। মূলত এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। কারণ, ১ হাজার কোরাইশ সৈন্যের বিপরীতে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল খুবই কম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদের মাধ্যমে মু’মিনদের বিজয় নিশ্চিত করার করে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। এই যুদ্ধে ৭০ জন কাফির সৈন্য নিহত হওয়ার বিপরীতে মাত্র ১৪ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যা তদানীন্তন বিশ্বে ইসলামকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছিল। তাই দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যা সমাধানে বদরের শিক্ষাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে ইসলামের ঐতিহাসিক বিজয়, মুসলমানদের ঈমানের পরিপক্কতা অর্জন, সর্বোত্তম ইতিহাস সৃষ্টি, ইসলামের প্রথম সামরিক বিজয়, কুরাইশদের শক্তি খর্ব, জিহাদের অনুপ্রেরণা, আল্লাহর ওপর প্রগাঢ় আস্থাঅর্জন এবং মুসলমানদের পক্ষে আল্লাহর তায়ালার আসমানী সাহায্য। কালামে হাকীমের সূরা আল আনফালের ১২ নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে- ‘আর সেই সময়, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে ইঙ্গিত করেছিলেন, এই বলে, আমি তোমাদের সাথে আছি , তোমরা ঈমানদারদেরকে অবিচল রাখো, আমি এখনই এ কাফেরদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিচ্ছি। কাজেই তোমরা তাদের ঘাড়ে আঘাত করো এবং প্রতিটি জোড়ে ও গ্রন্থী -সন্ধিতে ঘা মারো’। মূলত রমজান মাস প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাস। রমজানে সাহাবায়ে কেরাম নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করার পাশাপাশি তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে আত্মত্যাগের নজরানা পেশ করেছেন, বিশ্ব ইতিহাসে তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আল্লাহর নির্দেশিত পথ, রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তার সহচরদের যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আত্মগঠন, আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। কিন্তু দেশে অগণতান্ত্রিক সরকারের অপশাসন ও দুঃশাসনের কারণে এই মোবারক মাসেও জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই জনগণের ওপর দলন ও পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। জনগণের ওপর হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জুলম-নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুপ্তহত্যা চলছে সমাজ তালে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে গোটা দেশকেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে। কথিত অভিযানের নামে একদিনে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে জনগণকে আতঙ্কিত করা হচ্ছে, অপরদিকে সরকারি দলের মাদক সম্রাটদের অপকর্মকে আড়াল করা হচ্ছে। তাই দেশ ও জাতিকে এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, মূলত গণবিচ্ছিন্ন শক্তি জনগণের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত চেয়ে বসেছে। তাই দেশ ও জাতিকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। জাতিকে বহুধাবিভক্ত রেখে কোন ভাবেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। অগণতান্ত্রিক শক্তির সাথে সমঝোতা করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। তাই দেশে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সকল শ্রেণি ও পেশার গণতন্ত্রমনা এবং শান্তিকামী মানুষদের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এ বিষয়ে সকলকে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক উদার গণতান্ত্রিক শান্তির সমাজ বিনির্মাণে সকল শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। অন্যথায় আমাদের জাতিস্বত্ত্বায় হুমকীর মুখে পড়বে।