বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মো. মা’ছুম বলেছেন, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার সাঈদী (রাহি.)কে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে দুনিয়াতে থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। রাসূল (সা.) এভাবে মৃত্যুবরণকারীকে শহীদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সুরা আল ইমরানের ১৫৭ নং আয়াতেও এই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। মাওলানা দুনিয়াবি কোন স্বার্থে জেলে যাননি বরং কুরআনের বাণী প্রচার করতে গিয়ে সরকারের রোষানলে পড়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনি শহীদ সাঈদীর চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফাসসিরে কুরআন শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রাহি.)-এর স্মরণে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসার সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম,কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীর সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসফিরে কুরআন ও শহীদ সাঈদীর সহকর্মী আল্লামা লুৎফর রহমান,এতে আরও বক্তব্য রাখেন,শহীদ আল্লামা সাঈদীর সন্তান শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটার মাহফুজুর রহমান।
আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর শাহাদাত কবুল ও রূহের মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, শহীদ সাঈদী দেশ ও জাতির জন্য বড় বড় খেদমত করে গেছেন। আর এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপোষহীন। তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে যে অবদান রেখে গেছেন তা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শহীদ বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। মরহুম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরভাগ দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সর্বোপরি তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি সরকার তাকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার তার ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
প্রধান অতিথি আল্লামা সাঈদীর জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওযার আহবান জানান।
তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী ছিলেন একজন কালজয়ী দাঈ। তিনি অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল পর্যন্ত ইসলামের শাস্বত বাণী মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। তার হাতে অসংখ্য মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে গর্বিত হয়েছেন। সর্বপরি তিনি ছিলেন বিশ^খ্যাত মুফাসসিরে কুরআন এবং খ্যতিমান মুহাদ্দিস। তিনি তার মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনে হক্বের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন এবং গণমানুষের মনের মণি কোটায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু তাতে দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। তিনি শহীদ সাঈদীর আদর্শ ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ। তিনি বিশ্ব বরেণ্য আলেমে দ্বীন। শহীদ তার আমল, আখলাক ও রুহানী শক্তি দিয়ে মানুষের মনের মনিকোটায় স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন আলেমদের চেরাগ, দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ এবং মহান ব্যক্তিত্ব। মরহুম বিনয় ও সৌজন্যবোধের অধিকারী এবং সকল শ্রেণির মানুষের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় ছিলেন। কারা জীবনে তার আকূতি ছিল শেষ বারের মত বায়তুল্লাহ শরীফ জিয়ারত ও কুরআনের ময়দানে ফেরা। তিনি শহীদের শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন ছিলেন বাংলাদেশের জন্য রহমত। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন। শহীদ মানুষকে কুরআনের পথে আহবান করে সফল হয়েছিলেন। তার দাওয়াতে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই ইসলামের পথে ফিরে এসেছিলেন। মূলত, তিনি ছিলেন কুরআনের ধারক ও বাহক। তিনি চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত করেন নি বরং সকল বাধা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই স্বীয় লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে শেষ পর্যন্ত শাহাদাতকেই হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন।
এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। তিনি দুনিয়ার আদালতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একজন বিচারপতি তাকে পুরোপুরি খালাস দিয়েছিলেন। আরেক জন তার প্রাণদÐ বহাল রাখেন। অপর দু’জন তার আমৃত্যু কারান্ডের আদেশ দিয়েছেন। বিশ্বের বিচারিক ইতিহাসে একই মামলার তিন ধরনের রায় বিরল ঘটনা। তার আমৃত্যু করাদÐ হলেও মৃত্যুর পর তার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এবং তার স্ত্রীকেও লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। যা সরকারের নির্মমতা। তিনি শহীদ সাঈদীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
মাওলানা লুৎফর রহমান বলেন, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অর্ধশতাব্দী ধরে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তিনি ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতেন এবং সে লক্ষ্যে তিনি জীবনের শেষ মহুর্ত পর্যন্ত অবিচল ছিলেন। আজ তিনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন এবং শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের সহকর্মী এবং রাহবার। তাই তার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে কাজ করতে হবে। তিনি আল্লামা সাঈদীর চেতনা অনুসরণে শহীদ বা গাজী হওয়ার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
শামীম সাঈদী বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে সাজানো ঘটনা ঘটনানো হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল সকল শীর্ষনেতৃবৃন্দকে হত্যা করা। পরিস্থিতির কারণে আল্লামা সাঈদীকে প্রাথমিকভাবে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তীকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তার জীবনের পুরো সময়টাই কুরআনের জন্য বরাদ্দ ছিল। কারাগারেও তিনি দ্বীনের দাওয়াত সম্প্রসারণে কাজ করে গেছেন। তিনি শহীদ সাঈদীর দেখানো পথে সকলকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সকলের প্রতি আবহান জানান।
মাসুদ সাঈদী বলেন, শহীদ সাঈদীর চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া ছিল রহস্যজনক। তাকে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখাও করতে দেয়া হয়নি। তাকে লাইভ সাপোর্টে নেয়া হলেও আমাদের সাথে পরামর্শ করা বা অনুমতি নেয়া হয়নি। তিনি দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে শহীদ সাঈদী সহ সকলের সকল শহীদের রক্তের বদলা নিতে সকলকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রিয় ইসলাম প্রিয়। কিন্তু সরকার ইসলাম বিদ্বেষী। আল্লামা সাঈদীর যেদিন মৃত্যুদÐ দেয়া হয় সেদিন সে রায়ের প্রতিবাদে দেড় শতাধিকার মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। তার শাহাদতের পরও সরকার সারাদেশে তান্ডব চালিয়েছে। ঢাকায় শহীদের জানাজা পর্যন্ত পড়তে দেয়া হয়নি। তাই এই জুলুমবাজ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। তিনি জুলুমবাজ সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি আহবান জানান।