যুব সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ, ইনসাফপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের।
তিনি ১২ আগস্ট শনিবার রাত ৯.১৫টায় রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহাগনরী উত্তরের যুব বিভাগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষ্যে এক ভার্চুয়াল যুব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি ও যুব বিভাগের সভাপতি ডা. ফখরুদ্দীন মানিকের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও যুব বিভাগের সেক্রেটারি নাসির উদ্দীনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসা। বিশেষ অতিথির আলোচনা রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। আরো আলোচনা রাখেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ইয়াছিন আরাফাত প্রমূখ।
এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, আজকের যুব সমাজই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যুগে যুগে যুবকরাই ইতিহাস সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারাই পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে স্রোতের গতিধারা। তিনি দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশ ও জাতি এক গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম। জাতির ঘাড়ে এক অগণতান্ত্রিক ফ্যাসীশক্তি জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। এছাড়াও নানামূখী ষড়যন্ত্রে জাতি আজ জর্জরিত। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য যুবকদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। অন্যথায় আমাদের মুক্তি মিলবে না।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নানামূখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক কঠিন পরিস্থিতি। সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত আবারো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীলনকসা প্রণয়ন করছে। তাই সরকারের দেশ ও জাতিস্বত্তা বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এবং জাতিকে আলোর পথ দেখানোর জন্য যুব সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সকলকে রাজপথে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
প্রধান আলোচক আব্দুর রহমান মূসা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাস যুব সমাজের হাতেই নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের যত বড় বড় অর্জন সবই হয়েছে যুব সমাজের হাত ধরেই। হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ তিতুমিরের মত প্রাণচঞ্চল যুবকদের হাতেই এসেছে আমাদের বড় বড় অর্জন। তাই জাতির এই ক্রান্তিকালে যুব সমাজকে ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই বরং সত্যের পতাকা উড্ডীন ও আমাদের কাক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে শপথ গ্রহণ করতে হবে। তিনি সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকারের অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সার কারণেই জাতির গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা নৈশ্য ভোটের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সত্যের উপরে মিথ্যার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমতাবস্থায় আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনই বিকল্প নেই। তিনি চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির আলোচনায় ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, যুবকদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। পৃথিবীর সকল বিপ্লবই সাধিত হয়েছে যুব সমাজের হাত ধরেই। আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.)-এর ভাষায়, সফল বিপ্লবের জন্য এমন এক যুব সমাজ দরকার যারা বাতাসের গতিতে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। মুতার যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সহ ইসলামের সকল বড় বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে তারুণ্যদীপ্ত যুব সমাজের হাত ধরেই। ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন কাসিম হাতেই সিন্ধু বিজয় এবং ইখতিয়ার উদ্দীন বিন বখতিয়ার খলজীর তারুণ্যের কাছেই রাজা ল²ণ সেন পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাই দেশ ও জাতিকে সঙ্কটমুক্ত করতে সকল ক্ষেত্রে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফখরুদ্দীন মানিক বলেন, আজকের যুব সমাজই দেশ ও জাতির আগামী দিনের কাÐারী। মূলত, যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়। ব্যক্তির সকল বড় বড় অর্জনই হয় যৌবনকালে। আল্লাহ প্রত্যেক বান্দাকে আখেরাতে ৫টি প্রশ্নের উত্তর চাইবেন। আর এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হচ্ছে, তার যৌবনকাল কীভাবে অতিবাহিত হয়েছে? তাই যৌবনকালকেই দুনিয়াতে ও আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। যুবকদের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার ভোটাধিকার।কিন্তু গত ১৫ বছরে তারা এটা পাচ্ছেনা।সরকার এটা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এ অধিকার আদায়ে যুবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
আলোচনা সভায় থানা ও ওয়ার্ড থেকে সহস্রাধিক যুব প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন।