প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী (উত্তর ও দক্ষিণ) এর উদ্যোগে আজ ৪ আগষ্ট, জুমাবার, ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যোনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১ লা আগষ্ট রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ওই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। সমাবেশের বিষয়ে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ই-মেইলে এবং বিকাল সাড়ে ৪ টায় সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে চিঠি দিয়ে আসেন।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা না করায় এবং ১ আগষ্ট কর্ম দিবস হওয়ায় সমাবেশের কর্মসূচিটি বন্ধের দিন অর্থাৎ আজ ৪ আগস্ট, জুমাবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যোনে নির্ধারণ করা হয়। আবারো ডিএমপি কমিশনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সমাবেশ কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
সভা সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃতি অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে সভা সমাবেশ করার অধিকার দেয়া হয়েছে। এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু প্রশাসন বারবার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আমরা তীব্র ভাষায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের আচরণ অগনতান্ত্রিক, অন্যায়, অনৈতিক। আমাদের সাথে বার বার অন্যায় করা হচ্ছে। দেশের সংবিধান বলেছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সরকারি দল যখন তখন অনুমতি ছাড়া সভা সমাবেশ করবে, আর আমাদের বেলায় অনুমতি লাগবে? এই দ্বৈত নীতি কেন?
সুপ্রিয় সাংবাদিকগণ,
জামায়াত আইনের দৃষ্টিতে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াতকে সে সুযোগ না দিয়ে সারা দেশে জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতের আট শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে নাজেহাল করছে। কোনো কোনো এলাকায় পুরুষ নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনী ও মানবাধিকার পরিপন্থি।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুলত: সরকার দলন, পীড়ণ, গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যেনতেনভাবে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশের জনগন সরকারের এই ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না।
প্রিয় সাংবাদিকগণ,
আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোন ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। প্রশাসন সহযোগিতার পরিবর্তে একটি সংঘাতমুখর পরিবেশের অবতারনা করেছে। তাই আমরা আজকে সোহরাওয়াদী উদ্যোনের সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করছি। এর প্রতিবাদে ৬ আগষ্ট, রবিবার বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনগনের অংশগ্রহন এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। জনগনের দাবী আদায়ে আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমরা আবারো প্রশাসনের অগনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীকে কোন দল বিশেষ নয়, দেশের পক্ষে, জনগনের পক্ষে এবং নিরপেক্ষ ভাবে তাদের প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ধৈর্য্য ধরে বক্তব্য শুনার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ