বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। মু’মিনগণ যাতে আত্মসংযোমের মাধ্যমে অত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন করতে পারে এ জন্যই সিয়াম পালনকে প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কালামে হাকীমে ঘোষিত হয়েছে, ‘ হে মু’মিনগণ ! তোমাদের ওপর সিয়াম পালনকে অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অত্যাবশ্যকীয় ছিল, যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার’। (সুরা আল বাকারা, আয়াত-১৮৩) তাই পবিত্র মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মু্ক্তি অর্জন করতে হবে।
তিনি গতকাল রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর রমনা পশ্চিম থানা আয়োজিত ‘ মাহে রমজানে মু’মিনের শিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর আতাউর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন থানা সেক্রেটারি ইউসুফ আলী মোল্লা। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আকতার হোসেন, সুলতান মাহমুদ, আবু সা’দ ও আবু সাঈদ মন্ডল প্রমূখ।
ড. এম আর করিম বলেন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মোবারক মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হয়েছিল। তাই এই মাসের মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। যে ব্যক্তি এই মহিমান্বিত মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গোনাহ মার্জনা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে কিয়ামুল লাইল পালন করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন। রোজাদারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দু’টি আনন্দের ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় আর অপরটি হলো আল্লাহর সাথে দিদার লাভের সময়। তাই প্রত্যেক ম’ুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা কাজে লাগিয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভে সচেষ্ট হওয়া। তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথ ও রাসুল (সা.) এর অনুসৃত আদর্শ অনুসরণ ও তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও জাতির ঘাড়ে এক অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসীবাদী শক্তি চেপে বসেছে। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই জনগণের ওপর দলন-পীড়ন চালাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসেও সরকার তাদের দলন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ইফতার মাহফিলের মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকার পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ফ্যাসীবাদী ও বাকশালী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সরকার নতুন অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছে তা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। আনুকুল্য পাবে উচ্চবিত্তের মানুষরা। তাই অর্থনীতিবিদরা এই বাজেটকে গবীর মারার বাজেট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই বাস্তবতাবিবর্জিত বাজেট প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও দ্রব্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকার ঈদে ঘর ফেরা মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পারেনি। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে গণপরিবহণে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গণবিরোধী সরকার এসব মানুষের দুর্দশা লাঘবে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ফলে সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করতে সমাজের সক্ষম ও বিত্তবান মানুষের প্রতি আহবান জানান।