প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়াবারাকাতুহ।
আপনারা জানেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ও জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল ২৮ জুলাই সকল মহানগরী এবং ৩০ জুলাই সকল জেলা সদরে শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশের আইজিকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। একইভাবে সকল মহানগরী ও জেলাগুলোতে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়। ১ আগস্ট ঢাকায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সমাবেশের বিষয়ে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ই-মেইলে এবং বিকাল সাড়ে ৪টায় সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমানের নেতৃত্ব আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে চিঠি দিয়ে আসেন। পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা চিঠিটি গ্রহণ করেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
প্রিয় সাংবাদিকগণ,
বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন, আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মী ও উলামায়ে-কেরামের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে জামায়াত ঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে হাজার হাজার লোকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, জামায়াতের দাবির প্রতি দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে।
আমরা লক্ষ্য করছি সরকার বিনা কারণে এবং অন্যায়ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিল বাধাগ্রস্ত ও ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছে। ২৮ ও ৩০ জুলাই এর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় পুলিশ ২৫০ জনেরও অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ও জুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি জনগণ সফল করেছে। জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলন-কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতে কোনো সরকারই জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ঠেকাতে পারেনি। বর্তমান সরকারও পারবে না ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় সাংবাদিকগণ,
জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিতে হামলা, বাধাদান, হয়রানী, মামলা দায়ের, গ্রেফতারের মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যস্ত। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত প্রজাতন্ত্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন দলের পক্ষ না হয়ে জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালন করুন। আপনাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ আচরন আশা করি।
সুপ্রিয় সাংবাদিকগণ,
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সেলিম উদ্দিন যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্য সরকার তাদেরকে কারাগারে আটক রেখেছে। বারবার জামিন পাওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে ও উচ্চ আদালতের নিদেশনা উপক্ষো করে নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো ও বিরোধীদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা করে রেখেছে। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকে আটক রেখে শূন্য মাঠে নির্বাচন করার প্রস্তুতি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়াও আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাসেসরে কুরআন আল্লামা দেলাও্য়ার হোসাইন সাঈদী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে এক যুগেরও অধিক সময় ধরে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামদেরকে বছরের পর বছর অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবী করছি।
প্রিয় সাংবাদিকগণ,
আগামীকাল ১ আগষ্ট মঙ্গলবার, বেলা ২টায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী (উত্তর ও দক্ষিণ) এর উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। ইতিমধ্যে আমরা সমাবেশ বাস্তবায়নে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। জনগনের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ন সমাবেশে রাজধানী সকল শ্রেনী পেশা, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সকলে দলে দলে যোগ দিন। আমরা আশা করছি, নগরবাসীর স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহনে এটি একটি ঐতিহাসিক সমাবেশে পরিণত হবে।
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, গত ১০ জুন স্বল্প সময়ের নোটিশে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শান্তিপূর্ন ও সুশৃংখল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জনগনের দাবী আদায়ে আগামীকালকের শান্তিপূর্ন সমাবেশ বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসনসহ আমরা সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
ধৈর্য্যসহকারে আমার বক্তব্য শুনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ, মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
আল্লাহ হাফেজ,
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।