যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্তভাবে সবার ভূমিকা চর্চা আমরা সমর্থন করি। মানবাধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোন বিষয়ের বিরোধিতা করি আমরা। ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নেয় না। তবে আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বের সব দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়, সারা দেশে গণবিক্ষোভ চলছে। এতে লাখ লাখ মানুষ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ র্যালিতে হামলা করছে ক্ষমতাসীনরা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের ও কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজারো মামলা দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রয়াত বিরোধীদলীয় নেতাদেরকেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ছাড় দিচ্ছে না। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকারে যারা বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে?
এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে যে-ই বাধাগ্রস্ত করবে তার বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। নীতির অংশ হিসেবে অন্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু প্রকাশ করেছি, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে তার চেয়ে বিস্তারিত আমি প্রকাশ করতে পারবো না। আগেও আমি এ বিষয়ে বলেছি। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে যেসব বিষয় বাধাগ্রস্ত করে তার মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভীতিপ্রদর্শন, জনগণকে মুক্তভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সভাসমাবেশের স্বাধীনতা চর্চা প্রতিরোধে সহিংসতার ব্যবহার। এ ছাড়া আছে রাজনৈতিক দলগুলো, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যবহার।
ম্যাথিউ মিলারের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকারের কর্মীদেরকে হুমকি, হয়রানি এবং রাষ্ট্রীয়, বিরাষ্ট্রীয় ‘অ্যাক্টরদের’ দ্বারা বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শতকরা ৮৬ ভাগ মানবাধিকারকর্মী নানাবিধ বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। ফলে আর্থিক বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি হাতিয়ার হিসেবে আছে সরকারের হাতে। এতে বহু আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহিতা সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধিকার বিষয়ক কর্মীরা তাদের পাওনা পাচ্ছেন না, যেমনটা আমি শুনেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কি এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন, কি মনে করেন আপনি? ম্যাথিউ মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে সবাই অবাধে তার ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে, এটাই সমর্থন করি। মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম বিধিনিষেধের বিরোধী আমরা।
এ সময় একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে। তিনি বলেন, আগেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থায় অসাংবিধানিক নির্বাচনকালীন সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে বিএনপি- এমন অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের। এর প্রেক্ষিতে আপনার পর্যবেক্ষণ কি? এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার উপরের ওই মন্তব্য করেন।
ম্যাথিউ মিলারকে আবার প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, নিজের আরও স্বার্থ হাসিলের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করতে মানবাধিকারের ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত, সৌদি আরব, ইসরাইল ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র চোখ বন্ধ করে রাখে বলে যুক্তিতর্ক আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
ম্যাথিউ মিলার এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি বলবো দুটি প্রশ্নের ভিতরে কিছু উত্তেজনা আছে বলে আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি নজরে নেবো এবং বলবো যে- যখন মানবাধির নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা দেখি, তখন আমরা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। যখন আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখি তখন কোনো দেশের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব, কোনো অংশীদারের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করি। এটাকে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলব।
অন্য একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান কম্বোডিয়ার একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে। তিনি প্রশ্ন করেন, রোববার আপনি বলেছেন, কম্বোডিয়ার ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনি কি এ বিষয়ে আর একটু বিস্তারিত বলবেন যে, এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে কে কে পড়লেন? স্পষ্টতই, সেখানে এটা কোনো নির্বাচন ছিল না। যা হয়েছে, তা হলো সিলেকশন। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার অধীনে কি কম্বোডিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয় কেউ আছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, নীতির অধীনে আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করি না।
মিলার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রকাশ করে না। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু ‘ডিজাইনেটেড’ কর্মকর্তাদের বিষয় জানায়। নীতির অধীনে অন্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু প্রকাশ করেছি, (বাংলাদেশে) ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে তার চেয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারবো না। কম্বোডিয়ার একতরফা নির্বাচন এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ইস্যুতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২৪শে মের নতুন ভিসা নীতি তুলে ধরেন।