‘সেই যদি নথ খসালি তাহলে কেনো লোক হাসালি’-আমাদের এলাকায় এ ধরনের একটি কথা প্রচলতি আছে। এর অর্থ হচ্ছে কোনো অবাস্তব বা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত যদি প্রত্যাহার করা হয় তাহলে বিলম্ব করা হবে কেনো? এই কথাটি ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ আংশিকভাবে প্রত্যাহার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অনুসরণ করে চলেছে ১৯৯১ সাল থেকে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই মুক্তবাজার অর্থনীতিকে সঠিকভাবে চলতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুফল আমরা পাচ্ছি না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতি উল্টো ফল দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ঋণের উপর আরোপিত আপার ক্যাপের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল সূত্র অনুসারে ঋণ গৃহীতার চাহিদা এবং ব্যাংকের ঋণের অর্থ যোগান দেবার সামর্থ্যরে উপর ভিত্তি করেই সুদের হার নির্ধারিত হবার কথা। গ্রাহকের ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সুদের হার বাড়বে। ঠিক একইভাবে গ্রাহকের চাহিদা হ্রাস পেলে ঋণের সুদের হার কমবে। আবার ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তারল্যের সঙ্কট দেখা দিলে গেলে সুদের হার বৃদ্ধি পেতে পারে। আর উদ্বৃত্ত তারল্যের সৃষ্টি হলে সুদের হার কমতে পারে। ব্যাংক আমানতকারিদের নিকট থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা নিয়ে এক ধরনের ‘বালিশ খেলায়’ মেতে থাকে। মহিলাদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বালিশ খেলার আয়োজন করা হয়। এই খেলার নিয়ম হচ্ছে নির্ধারিত সঙ্কেত শেষ হবার সময় বালিশ যার নিকট থাকবে তিনি খেলা থেকে আউট হয়ে যাবেন। তাই প্রত্যেকে চেষ্টা করেন কিভাবে তার নিকট বালিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পার্শ্ববর্তী মহিলার নিকট হস্তান্তর করা যায়। ব্যাংকের সংগৃহীত আমানত নিয়েও এ ধরনের খেলা চলে। কোনো ব্যাংক আমানতকারিদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহের পর তা যত দ্রুত সম্ভব ঋণ প্রত্যাশিদের নিকট দিয়ে থাকে। কারণ ব্যাংক আমানতকৃত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারুক আর নাই পারুক আমানতকারিদের নির্ধারিত সময় পর থেকে সুদ প্রদান করতে হয়। তাই ব্যাংক ঠিক মহিলাদের বালিশ খেলার মতোই আমানতকৃত অর্থ ঋণ গ্রহীতাদের নিকট বিনিয়োগ করে দায় মুক্ত হতে চায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে শুধু ঋণ দিলেই হয় না সেই ঋণের কিস্তি যাতে নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত আদায় হয় তা নিশ্চিত হতে হয়। এখানেই একজন ব্যাংকারের কৃতিত্ব। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সহায়কের, নিয়ন্ত্রকের নয়। ব্যাংকগুলো বাজারে ঋণের চাহিদা এবং তাদের বিনিয়োগ সামর্থ্য বিবেচনা করে সুদের হার নির্ধারণ করবে। কোনো সময় যদি ব্যাংকগুলো অনৈতিক বা অস্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাপৃত হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো রীতি প্রত্যক্ষ করা যায়। ১৯৯১ সাল থেকে দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রচলিত থাকলেও কখনোই ব্যাংকিং সেক্টর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্তভাবে পরিচালিত হতে পারেনি। ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থার জন্য এটা অন্যতম কারণ।
আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতটা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে আর কতটা মহল বিশেষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং সেক্টর মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু একই বছর ২০ জুন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) এর প্রস্তাবনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের উপর আরোপিত সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত ছিল বিস্ময়কর এবং অদূরদর্শী। কারণ সেই সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকে অনুসন্ধান করে জেনেছিলাম তখন সেই ব্যাংকের ‘কস্ট অব ফান্ড’ (বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যাংকের যে ব্যয় হয়) ছিল সোয়া ৮ শতাংশ। একটি ব্যাংক সোয়া ৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে ফান্ড গঠন করে তা থেকে ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ‘লাল বাতি’ জ্বলতে বেশি দিন সময় লাগবে না। সেই সময়ই ব্যাংক সংশ্লিষ্টগণ এই সিদ্ধান্তের অসারতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্ত তাদের সেই দাবি বা অনুরোধের প্রতি কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। এতে ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন ঋণ দান কার্যক্রম নিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এক শ্রেণির উদ্যোক্তা, যারা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী তারা বিপুল পরিমাণে ঋণ নিতে থাকে ব্যাংক থেকে। অনেকেই গৃহীত ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করেন। এমনকি বিদেশে পাচার করেন বলেও অভিযোগ উঠতে থাকে। কিভাবে এবং কতটা অর্থ ঋণের নামে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে বেরিয়ে যায় তার একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। বর্তমান মুদ্রানীতির আগের মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের বেশির ভাগই দেয়া হয় শিল্প খাতে। ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের এই উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করে। কারণ ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের ভালো প্রবৃদ্ধি হবার অর্থই হচ্ছে দেশে শিল্প-কারখানা এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যে চাঙ্গা ভাব সৃষ্টি হওয়া। কিন্তু আমাদের এখানে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে। গত অর্থবছরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছে ৭৬ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। তাহলে ছাড়কৃত ব্যাংক ঋণের অর্থ কোথায় গেলো? অনেকেই মনে করেন, ছাড়কৃত ব্যাংক ঋণের একটি বিশাল অংশই নানাভাবে অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। অনেকেই বিদেশে এই অর্থ পাচার করেছেন। একটি চিহ্নিত মহলকে সুবিধা দেবার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ আরোপ করেছিল। একইভাবে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন অজুহাত তুলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১ টি শিল্পগোষ্ঠীকে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের নামে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে মাত্র ২টি শিল্পগোষ্ঠী শর্তানুযায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক কারণে কি শুধু ৫০০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব ঋণ খেলাপিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল? যিনি ৪৯৯ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি তিনি কি ক্ষতিগ্রস্ত হননি? এ ধরনের সুযোগ দেয়া হলে তা সবার জন্য অবারিত করা উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা না করে মহল বিশেষকে এমন অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে।
দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের আপত্তিকে কোনো পাত্তা না দিলেও ইন্টারন্যাশনাল মানিটারিং ফান্ড (আইএমএফ) শর্ত দেয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার কিছটা বাড়িয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের আগে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এরপর সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নতুন নিয়ম অনুসারে এখন থেকে সিএমএসএমই খাতের জন্য ঋণ দানের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের জন্য দেয়া ঋণের সুদের হার হবে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। কৃষি ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। কোনো সুদ আরোপ করার পর ৬ মাসের মধ্যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ ৯ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিলেও তা সম্পূর্ণরূপে বাজারমুুখী করা হয়নি। এখানেও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই নতুন সুদের হার প্রদর্শন করে আইএমএফ’কে কিছুটা খুশি করা গেলেও বাস্তব পরিস্থিাতির তেমন কোনো উন্নতি হবে না। ব্যাংক ঋণের সুদের হারকে সম্পূর্ণ বাজারমুখী করা প্রয়োজন ছিল। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রচলিত ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে একই পরিবার থেকে চারজন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। আগের আইনে একই পরিবার থেকে ২ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান ছিল। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম ৩ বছর করে) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। এখানেও সংশোধনী আনা হয়। তাদের মেয়াদকাল তিন টার্ম করা হয়। সংশোধিত আইনে একই পরিবার থেকে ৩ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মেয়াদকাল কমানো হয়নি। ব্যাংকিং সেক্টরে ‘ইন সাইড লেন্ডিং’ সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না।
ব্যাংকিং সেক্টরের ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে দেবার ফলে কি ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্য আমরা সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উপর দৃষ্টি দিতে পারি। বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হলে অনেক দেশই তাদের নীতি সুদ হার বা পলিসি রেট (রেপো রেট)। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে সিডিউল ব্যাংকগুলোকে যে ধার বা ঋণ প্রদান করে তাকে রেপো রেট বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার এক পর্যায়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, যা ছিল দেশটির ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। বৃটেনের মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করে যায়। তারাও পলিসি রেট বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পলিসি রেট বৃদ্ধি এবং এধরনের আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশগুলো তাদের মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়। পলিসি রেট বৃদ্ধি করা হলে ব্যাংক ঋণ আগের তুলনায় কস্টলি হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চাইলেই একজন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে যায়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপর প্রভাব পড়ে। তাই সংকুচিত অর্থের প্রভাবে পতিত হয়। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে জার্মানির মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৬দশমিক ১ শতাংশে, ভারতের ৬ দশমিক ৫শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২৫ দশমিক ২ শতাংশে, তুরস্কের মূল্যস্ফীতি ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি না কমে বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা মে মাসে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এক সময় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে উন্নীত হয়নি। কিন্তু পরিকল্পনামন্ত্রীর সেই সন্তুষ্টি হয়তো অচিরেই ম্লান হয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরের মধ্যে পলিসি রেট অন্তত ৪ বারে এক শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা ৬ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পলিসি রেট বাড়ানো হলেও ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ ৯ শতাংশ বহাল থাকার কারণে অর্থনীতিতে উল্টো ফল দিয়েছে। ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় সহজলভ্য হয়েছে। ফলে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ না করে বরং আরো উস্কে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সুদের হার কিছুটা বাড়িয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ বহাল রেখেছে। এই অবস্থায় কোনোভাবেই কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে না। তাই অতি দ্রুতই ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ন্ত্রণের কৌশল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় যেই লাউ সেই কদুই পাওয়া যাবে প্রকৃত অর্জন হবে না।