বগুড়ায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার সেলের ধোঁয়ায় শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা গুরুতর নয়। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে।
জানাগেছে, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির পদযাত্রা ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে এলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এসময় স্কুলের জানালা দিয়ে টিয়ারসেলের ধোয়া স্কুলঘরের ভেতরে প্রবেশ করলে ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর স্কুল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘মূলত আতঙ্ক আর টিয়ারশেলের ধোঁয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারও কারও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।’ দুপুর ৩টার দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসিইউয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা অপেক্ষা করছেন। মমতাজ বেগম নামে এক নারী বলেন, তার মেয়ে নাদিয়াকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্কুল থেকে জানানো হয়েছে। আইনুল হাসান পলাশ নামে অপর এক অভিভাবক জানান, নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার মেয়েকেও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি আতঙ্কের কারণেই সে অসুস্থ হয়েছে। খবর পেয়ে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম, বিএমএ বগুড়ার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, স্বাচিপ বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক ডা. সামির হোসেন মিশু, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা রফি নেওয়াজ খান রবিন এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে যান। পরে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেন। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা গুরুতর নয়। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে দুইজন বাড়ি চলে গেছে। অন্যরাও আজই বাড়ি ফিরতে পারবে। দুপুর ৩টার দিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম। তিনি জানান, ‘টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ার পাশাপাশি আতঙ্কের কারণে একসঙ্গে এতো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাধারণত অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকলে কয়েকজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখানেও তাই হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই।’