ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে ত্রাহি অবস্থা সিলেটে। জনজীবন বিপর্যস্ত। নগরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় হলেও গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে সিলেটে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক মাস ধরে প্রায় দিনই এক-তৃতীয়াংশ হারে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আর গরম বেশি হলে চাহিদা বেড়ে যায়। তখন আরও বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে। এদিকে- রাতের বেলা লোডশেডিং তীব্র হওয়ার কারণে মানুষের হাঁসফাঁস বেশি। গত কয়েক দিন ধরে সিলেটে গরম পড়েছে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির কাছাকাছি।
এ কারণে লোডশেডিং হওয়ার কারণে বাসাবাড়িতে পানি সংকটও হচ্ছে। সিলেটে গত মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে তেমন লোডশেডিং হয়নি। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে লোডশেডিং লেগেই আছে। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ী নেতারা এরই মধ্যে সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে মেয়রকে অবগত করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি লোডশেডিংয়ের বিষয়টি দেখবেন বলে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করলেও বর্তমান সময়ে লোডশেডিং কমাতে তার কোনো উদ্যোগ নেই। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন- শুক্রবার সিলেট সফর করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবেন। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করবেন। সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে নীরব। তাদের দাবি হচ্ছে; যে পরিমাণ বিদ্যুৎ তারা পান তাই বিভিন্ন জোনে ভাগ করে দেন। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে লোডশেডিং থাকবে না বলে জানান তারা। বিদ্যুৎ বিভাগের গতকাল বুধবারের তথ্যমতে- সিলেট বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তারা লোড পেয়েছেন ৩৫০ মেগাওয়াট। বাকি ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে কাভার করতে হয়েছে। সিলেট জেলায় বিউবো ও পবিস মিলে চাহিদা ছিল ৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ১৮৩ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একই হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের মতে; রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং কমিয়ে এখন সিলেটে বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে।
সিলেট বিদ্যুতের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদির গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম সরবরাহ করার কারণে সিলেটে লোডশেডিং বেড়েছে। লোডশেডিং হওয়ার কারণে বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তারা স্থানীয়ভাবে চাপের মুখে পড়েছেন। তারাও এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের অবগত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে- সিলেটে কলকারখানা নেই। তবে উৎপাদনশীল খাত বলতে শুধু দু’টি বিসিক শিল্প নগরী। এ দু’টি শিল্পনগরীতে খাদ্যজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। দু’টি শিল্প নগরীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গত কয়েক দিন ধরে তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়েছেন মালিকপক্ষ।
শিল্প এলাকায় যেসব মেশিনারিজ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো জেনারেটর দিয়ে চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা। সিলেট চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফালাহউদ্দিন আলী আহমদ বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সিলেট হচ্ছেÑ মার্কেটের শহর। বিদ্যুৎ না থাকায় মার্কেটে জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। দিনশেষে জেনারেটরের তেলের দামও পান না ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চেম্বারকে অবগত করছেন। এর পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাতেও এর চাপ পড়েছে। যে দু’টি শিল্পনগরী রয়েছে সেগুলোতে লোডশেডিং হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পমালিকরা। এ সব বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে তারা সিলেটের মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটে আসবেন। তার সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।