সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল, ব্যাংক বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এডিস মশার প্রজননস্থল। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু নিধনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ডেঙ্গুর বিস্তারের এ সময় কর্মস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। চিঠি দিয়ে সতর্ক করার পরও কোথাও পরিদর্শনে গিয়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে করা হবে জরিমানা। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা সংক্রান্ত এই চিঠি পাঠাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি করপোরেশন। বুধবার সচিবালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সব সরকারি অফিসে আজকেই (বুধবার) চিঠি দেন। এই মিটিং রেফারেন্সে দিয়ে চিঠি দিতে হবে। সরকারি অফিসগুলোকেও জরিমানা করা হবে। কারণ সরকারি অফিস ও হাসপাতাল এডিস মশা প্রজনন করছে। বেসরকারি অফিসেও একইভাবে মশা প্রজনন হচ্ছে। তথ্য আছে, বেসরকারি ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করা হয়। কিন্তু সেখানে মশার প্রজনন হচ্ছে। সেদিকে কারও নজর নেই।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আমরা সরকারি অফিসগুলোতে চিঠি পাঠাব। আপনারাও মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেন। যাতে কোথাও লার্ভা পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। মহানগরসহ দেশের থানাগুলোতে মশার লার্ভা প্রজনন রয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, মিটিংয়ের রেফারেন্সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেন। জব্দকৃত যানবাহনসহ টায়ার-টিউবে স্প্রে করার ব্যবস্থা করেন। স্কুলগুলোতে সভা করা হয়েছে, সেখানে ফাইন (জরিমানা) করার ব্যবস্থা করেন। স্কুলের আঙিনা পরিষ্কার করতে হবে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পেলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রথমবার তা পরিষ্কার করে দেবে। এরপরও তা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে। তৃতীয়বার লার্ভা পাওয়া গেলে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, বারবার সতর্ক করার পরও যারা মশার প্রজনন করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কোনো উপায় নেই। হাসপাতালের আশপাশে মশা প্রজনন হয়। এটা হওয়া উচিত নয়। এছাড়া তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিন-এ এসএমএস বিটিআরসির মাধ্যমে সবার মোবাইলে পাঠানোর সিদ্ধান্তও এসেছে সভায়।
ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হবে কি না-এমন প্রশ্নে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতাল চালু করতে বলেছি। সেখানে ৮০০-৯০০ রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব। মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ আরও অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। যখন একজন লোকও আক্রান্ত না হয় এবং একজন লোকও যদি মৃত্যুবরণ না করে তবেই আমি নিজেকে সফল বলে দাবি করব।
ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হবে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ তখনই ঘোষণা করা হয় যখন আমরা আর পারব না। এমন তো ঘটনা নয় যে, নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। আমাদের কাজ করার যোগ্যতা আছে।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যেসব বাসা-বাড়িতে নির্মাণ কাজ চলছে এবং মশার লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের বারবার সচেতন করার পরও যদি না মানে আমরা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেব।
তিনি বলেন, গত ৮ জুলাই গিয়েছিলাম জাপান গার্ডেনে। সেখানে ২৭টি ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোর নিচে গাড়ি ধোয়ার স্থানে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি স্থানে গিয়েছিলাম সেখানেও একই অবস্থা। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় চলতি মাসে ১১ দিনে এক কোটি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান মেয়র। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সিটিকে আরও ১০-১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।