আমলা এবং আমলাতন্ত্র শব্দটি কিছুটা শ্লেষাত্মক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই আমলাদের আচার-আচরণ ও ক্ষমতা প্রয়োগের ধারাবাহিকতায় নেতিবাচক বিষয়টিকে সিদ্ধই মনে হয়। কেতাবি অর্থে আমলা বা আমলাতন্ত্র ব্যতীত সরকারব্যবস্থা কল্পনা করা কঠিন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন, সরকারের কার্যকারিতা দু’টি স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল- আমলা ও রাজনীতিক। আমলারা স্থায়ী ক্ষমতাধারী আর রাজনীতিকরা অস্থায়ী ক্ষমতাধারী। এ দু’টি একে অপরের সম্পর্ক ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।
এই সম্পর্ক যদি নিয়মতান্ত্রিক হয় তাহলে জনগণের মঙ্গল। আর তা না হয়ে সম্পর্ক যদি হয় নীতির পরিবর্তে দুর্নীতির, তাহলে পরে জনগণের সর্বনাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। সাম্প্রতিক সময়ে আমলা-রাজনীতিক সম্পর্ক মধুর না হয়ে তিক্ততর হয়েছে। যেখানে আমলাতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক, শক্ত ও আইনানুগ সেখানে রাজনীতিকদের ওপর আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে শাসনব্যবস্থাটি আইনানুগ নয়; বরং স্বৈরতান্ত্রিক- সেখানে আমলাতন্ত্রের দর্পচূর্ণ হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় একতরফা ব্যক্তিতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র। সেখানে আমলাতন্ত্র হয়ে পড়ে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলনির্ভর। আমলারা পদলেহনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন।
ব্যক্তির কাছে কে কত বিশ^স্ত তার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে সর্বত্র। সর্বোচ্চ ব্যক্তি যদি অনিয়মতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত হন তাহলে সুশাসনের সেই কথিত জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সততা বিলোপ পায়। আমলাতন্ত্র বেপরোয়া, বেআইনি, অনমনীয়, অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠে। সেই সাথে আমলাতন্ত্রের সেই পুরনো দোষগুলো- লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, অযথা সময় নষ্ট ও অপব্যয়িতায় নিমগ্ন হয়। আমলাতন্ত্রের কেবলই যে সব দোষ তা নয়; একটি দেশে আমলাদের আমলাতন্ত্র যদি হাঁটে কঠিন নিয়মতন্ত্রের পথে; তাহলে নেতিবাচক রাজনীতিকদের সময় কঠিন হয়ে উঠে। আমলাতন্ত্রকে যারা ইতিবাচকভাবে দেখতে চান, তারা বলেন- এটি একটি মেশিনের মতো। কম্পিউটার যেমন মামু-খালু চেনে না, সেরকম কঠিন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে আমলাতন্ত্র। পৃথিবীর সর্বত্র এবং এই দেশে দুঃসময়েও এরকম উদাহরণ রয়েছে। রাজনীতিকরা ক্রমেই দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠায় ইতিবাচক আমলাতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমলাতন্ত্রের সনাতন বিশেষজ্ঞ জার্মান সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবার জনস্বার্থে একে নিবেদন করেছেন। তিনি চেয়েছেন আমলাতন্ত্র হবে যৌক্তিক, নীতিনির্ভর, সুদক্ষ ও সুসংগঠিত। তাদের ক্ষমতা সীমিত থাকবে, একটি নিয়মতন্ত্রের আলয়ে। সেখানে নির্দেশের ক্রমবিন্যাস বা প্রশাসনিক কাঠামো হবে আইনানুগ। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা প্রতিফলিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। একটি নৈর্ব্যক্তিকতা দিয়ে পরিচালিক হবে প্রশাসন। সেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর নির্দেশনা ও প্রাধান্য থাকবে না। অবশ্যই রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা শক্তভাবে অনুসৃত হবে।
আমরা সবাই জানি, রাষ্ট্রের শাখা-প্রশাখা প্রসারিত ও প্রশমিত হয় আমলাদের মাধ্যমে। যে দেশের আমলাতন্ত্র যতটা দক্ষ ও যোগ্য; সে দেশ ততটা সুশাসিত ও উন্নত। দেশের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে আমলাতন্ত্রের ভূমিকার ওপর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়- রাষ্ট্রের অস্থায়ী গডফাদার রাজনীতিকরা তাদের ইচ্ছাতন্ত্রের কাছে আমলাতন্ত্রকে সমর্পিত করেন। আর সেটি যদি হয় স্বৈরতন্ত্র, তাহলে প্রজাতন্ত্রের অধঃপতন ছাড়া রক্ষা নেই।
আমলা বনাম রাজনীতিক- বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বহুল কথিত একটি জটিল ও কুটিল বিষয়। প্রথাগতভাবে বলা হয়, প্রশাসন ও রাজনীতি ভিন্ন অবস্থানে থাকে। রাজনীতিকদের কাজ হচ্ছে নীতি প্রণয়ন। আর আমলাদের বা প্রশাসকদের কাজ হচ্ছে তার যথার্থ বাস্তবায়ন। সব সমাজে সবসময় ব্যাকরণ কাজ করে না। নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে যায়। আমলারা রাজনৈতিক প্রভুদের যথার্থ আইন ও নীতিতে পরিচালনা করবেন এটি আশা করা হয়। তারা নীতিগত ও প্রায়োগিক নির্দেশনা উপস্থাপনা করবেন। রাজনৈতিক প্রভুদের ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় আমলাদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে না। কিন্তু চিরায়তভাবে আমলা রাজনৈতিক বিরোধ একটি স্বাভাবিক বিষয়। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রও এর থেকে ভিন্নতর কিছু নয়।
বিগত ৫০ বছরে যেসব শাসক আমলাতন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে দেশ শাসন করেছেন, সেখানে ন্যূনতম মূল্যবোধ ও সুশাসন নিশ্চিত ছিল। কিন্তু অতিমাত্রিক রাজনীতিকদের আমলে সেই ব্যতিক্রমটি পরিলক্ষিত হয়নি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল গুলিয়ে গেছে। একাকার হয়ে গেছে। আগের আমলে অন্তত ওসি ও ডিসির অবস্থান যে রাজনীতিকদের থেকে ভিন্নতর তা বোঝা যেত। কিন্তু এই আমলে রাজনীতিকরাই হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওসি ও ডিসি। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, ওসি সাহেব এমপি সাহেব বা চেয়ারম্যান সাহেব বা ক্ষমতাসীন দলের সভাপতির অনুমতি ছাড়া মামলা গ্রহণ ও বর্জন করতে পারে না। ডিসি সাহেব প্রতিটি জেলায় ঠুঁটোজগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার আদেশ বা নিষেধে কোনো কাজ হয় না। দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সচিব থেকে চৌকিদার পর্যন্ত দলীয় আবরণে সীমাবদ্ধ।
নির্বাচনকালীন সময়ে সে আরেক দৃশ্য। প্রশাসনের প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়। সেখানে এক নেতা এক দল চেতনা প্রতিফলিতই নয়; বরং প্রতিষ্ঠিত। নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দু যেহেতু জেলা প্রশাসকরা, সে জন্য তাদের নিয়েই ক্ষমতাসীন দলের চিন্তাভাবনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও আরেকটি বড় অংশ।
আগামী নির্বাচনটি যেহেতু একটি কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়; সেহেতু সরকার অতিসাম্প্রতিককালে বিবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনপ্রশাসনকে তাদের অনুগত রাখার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ২৮ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সবাই জানি, জাতীয় নির্বাচনে সাধারণত জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রার্থিতা নিয়ে নানা হেকমত করতে পারেন। ঠুনকো অজুহাতে ছলে-বলে-কলে-কৌশলে সরকারি দলের অনুকূলে তারা এসব কাজ করে থাকেন। সে জন্য নির্বাচনকালীন জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা দেয়। এ ছাড়া ভোটের আগে ও পরে পুলিশ সুপার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদল করছে। পুলিশ প্রশাসনে কমপক্ষে ১০০ জনের বদলি ও স্থানান্তর আদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে ইউএনও পদে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন ৪৫ জন। এটি স্পষ্ট, সরকার নির্বাচনের আগে পছন্দের কর্মকর্তাদের দিয়ে মাঠ প্রশাসন সাজাচ্ছে। নতুন নিয়োগকৃত ডিসিদের মধ্যে সাতজনই বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন। এ ছাড়া আরো রয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আরো ১১ জন। বিশ^াস করা হয়, এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারের বশংবদ লোকেরাই পোস্টিং পেয়ে থাকেন। এবার ডিসি পদে নতুন করে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাও ডিসি হয়েছেন। ডিসি পদে থাকা ২২তম বিসিএসের সব কর্মকর্তাকে তুলে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিসি পদে থাকা ওই ব্যাচের ২০ জনের মতো কর্মকর্তার বদলি হয়েছে। বলা হয়েছে, এরা শিগগিরই যুগ্ম সচিব পদে অভিষিক্ত হবেন। লক্ষণীয় বিষয়, সরকার কাউকেই অখুশি করতে রাজি নয়। সরকার যেমন নতুনদের অর্থাৎ আওয়ামী প্রশাসনের আওতাধীন সময়ের লোকদের জেলা প্রশাসক বানাচ্ছে, অপর দিকে সিনিয়রদেরও বিবিধ পন্থায় পদোন্নতি দিয়ে সন্তুষ্ট করছে।
এই সরকারের আমলে সুনির্দিষ্ট পদের বিপরীতে পদোন্নতি না হয়ে পাইকারিভাবে তুষ্ট করার নীতিতে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ সরকারের সময় আমলাদের খুশি করার জন্য তাদের গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য ভাতাদি বাড়ানো হয়েছে। জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল- সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের মাত্রা নির্ণয় করা। খুব সঙ্গতভাবেই আওয়ামী লীগ ঘরানাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এই সূত্রে আরো জানা গেছে, কোনো একজন ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দেরও খোঁজখবর নেয়া হয়। কোনো না কোনোভাবে যদি বিরোধী দলের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বা আত্মীয়তার বন্ধন দেখা যায়, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক নিয়োগের উদাহরণ হিসেবে পত্রিকায় এসেছে, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের পিএস তার জেলা শরীয়তপুরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
নৈতিকভাবে সিদ্ধ নয়, এরকম আরো নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আরো বলা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে পাবনার ডিসি করা হয়েছে। উল্লিখিত নিয়োগগুলোতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। এসব নিয়োগে প্রার্থীর নৈতিকতা, যোগ্যতা ও সততা খুঁজে দেখা হয়নি। শুধু দলীয় আনুগত্যই ছিল মাপকাঠি। যেমন- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন উপ-সচিবকে হবিগঞ্জের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সরকার ইতঃপূর্বে বিব্রত হয়েছে। আরেকজন বিমান বাংলাদেশের সাবেক কর্মকর্তাকে ভোলায় ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত বছর গৃহীত নিয়োগ পরীক্ষায় তার বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ থাকলে তাদের উচ্চপদে নিয়োগ দেয়া হয় না।
রসিকতা করে বলা হয়, দেশ চালায় ডিসি আর এসপি। হ্যাঁ, এসপিদের ক্ষেত্রেও ব্যাপক রদবদল হয়েছে। ১৩ জনকে দেশের ১৩টি জেলায় পুলিশ সুপার বদলির আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৮ জুলাই সংবাদপত্রের প্রকাশিত আরেক খবরে জানা যায়, আরেকটি তালিকায় ২৪ জন পুলিশ সুপারকে অদল-বদল করা হয়েছে। এ বদলির আদেশগুলো নিরীক্ষা করলে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ইতঃপূর্বে তারা সবাই সরকারের বিশ^াসভাজন ছিলেন। বিভিন্ন জেলায় ডিসি-এসপি ভূমিকা বিশ^স্তভাবেই পালন করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের আরো বিশ^স্ত আরো একনিষ্ঠ লোক দরকার। তাই আস্থার প্রতিযোগিতায় একান্ত বিশ^াসভাজনদের নির্বাচনকালীন ডিসি-এসপি করা হয়েছে। স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত, এসব নিয়োগ-বদলি রাজনৈতিক। তার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাফাই গাইছে, এগুলো রুটিন ওয়ার্ক।
আমলা-রাজনীতিকদের সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তার চেয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা বেশি। আমাদের দেশে আমলাতন্ত্রের শুরুটা ছিল অতিমাত্রায় রাজনৈতিক। ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতেন। ছিল না কোনো পরীক্ষা, ছিল না কোনো বাছ-বিচার। ৭৩ ব্যাচের আমলারা তোফায়েল সার্ভিসের লোক বলে কথিত হয়েছেন। দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে প্রশাসনিক পরিবর্তনও সূচিত হয়। জিয়াউর রহমান তার শাসনকালে সিভিল সার্ভিসকে সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত করার প্রয়াস পান। কমবেশি ২০০৮ সাল পর্যন্ত তা বহাল থাকে। ১৯৭৩ সালের ক্ষমতাবানরা যখন আবার ক্ষমতা দখল করে ২০০৯ সাল থেকে, তখন স্বরূপে আবির্ভূত হন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেন, রাজনৈতিক পরিচয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ভিন্ন মতের কারণে বিসিএস পাস করেও চাকরি পায়নি, এরকম অনেক মামলা ঝুলছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যেভাবে প্রশাসনিক বিন্যাস করা হয়েছে তাতে ক্ষমতাসীনরা আবারো ক্ষমতায় থাকার খায়েশ প্রামাণ্য। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেও তারা এরকম সাজিয়ে ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকায় তাদের সে প্রয়াস কাজে লাগেনি। ২০১৪ ও ২০১৮-এর বোগাস নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দল বলছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত আর কোনো নির্বাচন নয়। ওই অভিজ্ঞতার আলোকেই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠিত। কারসাজি যাই হোক না কেন, নীতি ও নেতৃত্ব যদি প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে সিস্টেমের কাছে সব ষড়যন্ত্রই অকার্যকর প্রমাণিত হবে। গণমাধ্যমে একজন গানের সুরে লিখেছেন- ‘হায়রে মানুষ, ক্ষমতা ফুরালে ঠুস’। ‘আক্কেলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি’।
লেখক : অধ্যাপক, (অব:) সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com