এরপর দফায় দফায় সময় নিয়েও ভবনের ত্রুটি সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভবনটি সিলাগালা করে দেয় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীরা।
তারা গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বর তিন ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। আরও এক-দুই বছর সময় চান তারা। পুলিশ সরাতে গেলে ইটপাটকেল ছোড়েন। এরপর লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করে দিলেই শুরু হয় বিক্ষোভ।
এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীরা গুলশান-১ নম্বর মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। গাড়ি যেন চলতে না পারে সেজন্য দেওয়া হয় সিমেন্টের ব্লক। রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়টি বন্ধ করে দেওয়ায় চারদিকের রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
যার প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকায়ও। অবরোধকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করা হয়। তারা তা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
এ সময় কোনো মোটরসাইকেলও চলতে দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ডিএনসিসি মেয়রকে এসে মার্কেটটি খুলে দিতে বলেন। এরপরই অবরোধ প্রত্যাহার করবেন বলে জানান।
ব্যবসায়ীদের অনেকে বলেন, আমরা ডিএনসিসির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নই। তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। তবে এজন্য আমাদের ১-২ বছর সময় দিতে হবে। সময় পেলে আমরা ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো গুটিয়ে ফেলতে পারব। তখন মার্কেট ভাঙলে আমাদের সমস্যা হবে না।
মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, এভাবে মার্কেট বন্ধ করে দিলে আমরা লাখ লাখ টাকার লোকসানে পড়ে যাব। আর কোনোদিন দাঁড়াতে পারব না। আমাদের ব্যাংকে ঋণ আছে, মালিককে সিকিউরিটি মানি দেওয়া আছে, দোকানে লাখ লাখ টাকার মালামাল আছে। এগুলোর জন্য আমাদের আরও এক বছরের মতো সময় প্রয়োজন।
এদিকে ব্যবসায়ীদের সরাতে দফায় দফায় চেষ্টার পরও ব্যর্থ হয় পুলিশ। সবশেষ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ তাদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। অবরোধকারীরা ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। বিকাল চারটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শুরু হয় যান চলাচল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, সড়ক অবরোধ করে রাখায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলশান-১ মোড়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। দীর্ঘক্ষণ রাস্তাটি বন্ধ থাকায় অনেক মানুষ হয়রানিতে পড়ে। এরপর পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি পাশের ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এরপর গুলশান শপিং সেন্টারের অগ্নিঝুঁকি নিয়েও শুরু হয় আলোচনা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ২৮ মে মার্কেটটি পরিদর্শন করেন। অগ্নিঝুঁকিসংক্রান্ত ১০টি ত্রুটি শনাক্ত করেন তারা। ভবন মালিকদের এগুলো সারানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা মানেননি।
এরপর ২০১৮ সালের ১১ জুন ফায়ার সার্ভিস ভবনটি ‘ব্যবহার উপযোগী নয়’ বলে ঘোষণা করে। ওই নোটিশের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে আপিল করেন গুলশান শপিং সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক। দোকান মালিক সমিতি ফায়ার সার্ভিসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায়। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
২০২১ সালের ২১ জুন আবারও ওই ভবনটি পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটি। তারা সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। ঈদের পর সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যবসায়ীরা ভবন না ছাড়ায় ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন এবং মাহবুব হাসান বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করে দেন।
জুলকার নায়ন বলেন, ফায়ার সার্ভিস মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়। ভবন থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গত মাসেও ভবন বন্ধ করতে গেলে ব্যবসায়ীরা এক মাসের সময় নেয়। কিন্তু তারা সরেননি। মেয়রের নির্দেশে বৃহস্পতিবার গিয়ে মার্কেটটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ২০০ কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তারা কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। কেউ আছেন ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন আবার সেখানে থাকতেও চাচ্ছেন, এরাই বিক্ষোভ করছেন।