পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে জিরা ও এলাচ। এই দুই আমদানি পণ্যের দাম দেড় থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। লবঙ্গের দামও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদে এমনিতেই মসলার চাহিদা বেশি থাকে।
তার সঙ্গে ডলারসংকট, শুল্কহার বৃদ্ধির কারণে এলাচ ও জিরার আমদানি এবার কম হয়েছে। এ কারণে এসব মসলার দাম বাড়তি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এখন প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই জিরা খুচরা পর্যায়ে এক হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত এপ্রিলে একই জিরা বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
বাজারে এখন ভারত ও ইরানের জিরা বিক্রি হচ্ছে।
ইরানের জিরার দাম বেশি—কেজি ৯৫০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা কম। ভারতের জিরার দাম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি।
দেশে এলাচ আমদানি হচ্ছে ভারত ও গুয়েতেমালা থেকে।
পাইকারি বাজারে গুয়েতেমালার এলাচ মানভেদে এক হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতের এলাচ এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মান ভালো থাকায় গুয়েতেমালার এলাচের চাহিদা বেশি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত এপ্রিলে গুয়েতেমালার যে এলাচ বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ১০০ টাকা কেজি, সেই এলাচ এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আমেনা ট্রেডার্সের নুরুল আজিম বলেন, ৬৩ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করায় বাজারে দাম বেশি পড়েছে। আর বছরজুড়ে তো এলাচের এত চাহিদা থাকে না। ফলে কোরবানি ঘিরে চাহিদা বেশি থাকে; সে অনুযায়ী তো আমদানি হয়নি। ফলে দাম বাড়তি। কোরবানির পর দাম কমে যাবে।
খাতুনগঞ্জে চলতি সপ্তাহে কেজিতে ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ এক হাজার ৫০০; জায়ফল এক হাজার টাকা বেড়ে তিন হাজার ২০০; ১৫০ টাকা বেড়ে জয়ত্রী ৭৫০; ৭০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৩২০; ২০০ টাকা বেড়ে মিষ্টি জিরা ৩১০; ১৫০ টাকা বেড়ে গোলমরিচ ৬৭০; ৬০ টাকা বেড়ে ধনিয়া ১৮০; ৫০ টাকা বেড়ে সরিষা ১০৫ এবং ২০ টাকা বেড়ে তেজপাতা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে শুকনা মরিচ কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে গত বছরের চেয়ে এ বছর এলাচ ও জিরার আমদানি কম হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এলাচ আমদানি হয়েছিল এক হাজার ২৭২ টন। চলতি বছরের একই সময় এসেছে ৮৫৮ টন। একইভাবে ২০২২ সালের জানুয়ারি-মে মাসে জিরা আমদানি হয়েছিল দুই হাজার ৯৩৯ টন। চলতি বছর একই সময় আমদানি হয়েছে এক হাজার ৩০০ টন। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও দেশের স্থলবন্দর দিয়ে জিরা ও এলাচ আমদানি হয়।
এ ছাড়া ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দারুচিনি আমদানি হয়েছে চার হাজার ৬৯২ টন। এবার আমদানি হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টন। লবঙ্গ আমদানি হয়েছিল ২৯৫ টন; এবার আমদানি হয়েছে ৪২৩ টন। জয়ত্রী আমদানি হয়েছিল ১৪৬ টন; এবার আমদানি হয়েছে ১০৬ টন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত গোলমরিচ আমদানি হয়েছিল ৪৩৮ টন; আর এবার আমদানি হয়েছে ৪৯৩ টন।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মেসার্স অসীম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার অসীম কুমার দাশ বলেছেন, মসলার প্রকৃত আমদানিকারকরা মসলা থেকে দূরে সরে গেছেন চোরাচালানের কারণে। এ বছর এসে দেখা গেল ঋণপত্র খুলতে কড়াকড়ি, ডলারসংকট এবং শুল্কহার বাড়িয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরও ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪-৮৫ টাকা; এবার একই ডলার কিনতে হয়েছে ১১২-১১৩ টাকায়। এর সঙ্গে ঋণপত্র খুলতে শতভাগ মার্জিন দিতে হচ্ছে। এর ফলে যাদের ইচ্ছা ছিল মসলা পণ্য আমদানির, তারাও ছিটকে পড়েছে। এসব কারণে মসলা পণ্যের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/22/1292289