কোরবানির ঈদ চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম। এই সময়ে চামড়া সংরক্ষণে কাঁচামাল হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন লবণের চাহিদা থাকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদনের পরও লবণের উর্ধ্বমুখী দামের কারণে চামড়া সংগ্রহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়। কিন্তু লবণের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে প্রতিবস্তা ক্রুড লবণ বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ থেকে ১২৫০ টাকায়; যা এক সপ্তাহ আগেও ১১০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে। অথচ গত বছর কোরবানির ঈদের আগে ক্রুড লবণের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৫০ টাকা বেড়েছে ক্রুড লবণের দাম। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় লবণের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শুধুমাত্র চামড়াখাতে গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা ছিল। এবছর চাহিদা বেড়ে তা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টনে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গরু বা মহিষের চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণের প্রয়োজন। পরিবহন, শ্রমিক মজুরী, লবণের মূল্যসহ প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে গত বছর ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়েছে। কিন্তু লবণ ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবারে প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে খরচ হবে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ৭-৮ বছর ধরে চামড়া সংগ্রহকারী ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা নায্যমূল্য না পেয়ে বেশ লোকসানে রয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে বাড়তি দামের লবণ কিনে চামড়া সংরক্ষণ করলে তা বিক্রি করে খরচ উঠে আসবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, দেশে লবণের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। সম্প্রতি শেষ হওয়া মৌসুমে কক্সবাজারের টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ২৩ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ লাখ ১৬ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর ছিল ১৬ লাখ ৫৭ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে বাড়তি উৎপাদন সত্ত্বেও আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে বেড়েই চলেছে লবণের বাজার।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি এবং পূর্বের বকেয়া অর্থ ফেরত না পাওয়ায় চামড়া সংগ্রহকারীরা গত কয়েক বছর ধরে লোকসানে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। এবছর লবণের বাড়তি দাম নিয়ে আমরা আরো শঙ্কিত। চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের বিকল্প নেই। তাই লবণের দাম বাড়লে চামড়ার দামও বেড়ে যাবে।
চাক্তাইয়ের মেসার্স লাল মিয়া সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী আসাদ আসিফ বলেন, ‘বিসিকের হিসাবে ত্রুটি আছে। কারণ তারা এবার যে পরিমাণ লবণ উৎপাদনের দাবি করছে- সে পরিমাণ লবণ চট্টগ্রামের কোনো মিলে নেই। চাষীরাও বলছে তাদের কাছে লবণ নেই। তাহলে এত লবণ গেল কোথায়? তবে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির জানান, উৎপাদন বেশি হলেই দাম সহনীয় থাকবে এটা ঠিক নয়। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে লবণ পরিশোধনের খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। এ কারণে আগের বছরের চেয়ে এ বছর লবণের দাম বেশি। সম্প্রতি তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণেও মিলগুলোতে ক্রাশিং কার্যক্রম অর্ধেকে নেমে এসেছে।